নবরত্ন সভা
সুমন চট্টোপাধ্যায়
একদিন যদি খেলা থেমে যায়। দিন কয়েক আগে আমার এই পোস্ট বন্ধু-মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। রহস্যের পর্দা তুলে দিয়ে পরের দিনই জানিয়েছিলাম, আমার ওয়েবসাইটে (sumanchattopadhyay.com) এ বার আমি অন্যের লেখাও প্রকাশ করব, বাংলাস্ফিয়ার আর আমার একার জমিদারি থাকবে না, হবে অনেকের।
সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারলাম বলে আমার যারপরনাই আনন্দ হচ্ছে। বন্ধু ও পরিচিত বৃত্ত থেকে বেছে বেছে ন’জনকে অনুরোধ করেছিলাম লেখার জন্য। বিষয়— এক দিন যদি খেলা থেমে যায়। প্রত্যেকেই সাগ্রহে সাড়া দিয়েছেন বিনা পারিশ্রমিকে। সঙ্গের পোস্টারে রয়েছে সেই নবরত্নের মুখ।
এঁদের কাউকে কাউকে আপনারা চেনেন, কারও হয়তো নাম শুনে থাকবেন, কেউ আবার সম্পূর্ণ অপরিচিত। আসুন এঁদের সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই প্রেসিডেন্সি কলেজ ম্যাগাজিনের দুষ্টুমি ভরা স্টাইলে।
এঁদের কাউকে কাউকে আপনারা চেনেন, কারও হয়তো নাম শুনে থাকবেন, কেউ আবার সম্পূর্ণ অপরিচিত। আসুন এঁদের সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই প্রেসিডেন্সি কলেজ ম্যাগাজিনের দুষ্টুমি ভরা স্টাইলে।
সন্মাত্রানন্দ- ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা’ লিখে জনপ্রিয়তার শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছে গিয়েছিলেন। প্রকাশকও সম্ভবত হিসেব রাখেন না বইটির কতগুলি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর বই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়, আনন্দ ও সাহিত্য আকাদেমির ক্ষেত্রে যেমন হয়েছিল, কিন্তু শেষমেশ নেপোয় এসে দই মেরে যায়। পেশায় শিক্ষক, নেশায় লেখক সন্মাত্রানন্দ বাংলা লেখালেখির জগতে অতি-উজ্জ্বল তারকা, নিশ্চিত ভাবে আরও অনেকদিন আকাশে তাঁর দীপ্তি ছড়িয়ে থাকবে।
সুকল্প চট্টোপাধ্যায়—কবি মহলে সুপরিচিত নাম যদিও ওর কবিতা হৃদয়ঙ্গম করার মতো বোধ বা বুদ্ধি কোনওটাই আমার নেই। বাজারের ফর্দও ও ধ্রুপদী বাংলায় লেখে, পরোপকারী, বন্ধু বৎসল, বড্ড ভালো মানুষ। আমার সহোদর।
উজ্জ্বল সিনহা—কলকাতার একটি নামী বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধার, ব্যবসায়িক ভাবে সফল বাঙালির ক্ষুদ্র তালিকার একজন। এই পোশাকী পরিচয়ের আড়ালে রয়েছে বুদ্ধিদীপ্ত, অনুসন্ধিৎসু মন, বিস্তর পড়াশুনো, বাংলা-ইংরেজি দু’টি ভাষার ওপরেই ঈর্ষনীয় দখল। সিঙ্গুরের ধানচাষ থেকে মেক্সিকোয় ডাকাতি, পার্থিব-অপার্থিব সব বিষয়েই ওর কিছু না কিছু বলার থাকবেই। বন্ধুমহলে সে জন্য ওর নামকরণ হয়েছে ইউপিডিয়া!
দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী- খবরের কাগজের অফিস আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ক্রমাগত যাতায়াত করতে করতে আমার কন্যা-সমা এই বিদুষী মেয়ে অবশেষে থিতু হয়েছে। আপাতত সে ভারতের সর্ববৃহৎ নামজাদা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অশোকায় ডিন অব স্টুডেন্টস। অনেক বছর আগে আমার কাছে দেবশ্রুতি সাংবাদিকতার প্রথম পাঠ নিয়েছিল, এতদিন পরেও আমি ওর কাছে ‘বস’-ই রয়ে গেলাম।
সঙ্ঘমিত্রা রায়চৌধুরী— এই সেদিনই ওর জন্মদিনে আমি সঙ্ঘমিত্রাকে ‘ফেসবুক গেরিলা’ বলে সম্মান জানিয়েছি। উৎসাহী হলে লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।
কস্তুরী চট্টোপাধ্যায়- আমার গিন্নি, আকৈশোর বন্ধু, শিবরাত্রির সলতে। পরস্ত্রী হলে গুণপনার কথা ফলাও করে বলা যেত, এক্ষেত্রে করলে নিজেকে কেমন দু’কান কাটা মনে হতে পারে।
নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়—‘জাপানি-বাঙালি’। ওর শরীরটা থাকে শান্তিনিকেতনে, মনটা টোকিও, কিয়োটো বা ওসাকায়। সম্পূর্ণ জাপানি শৈলীতে ও শান্তিনিকেতনে একটা বাড়ি করেছে, নাম ‘কোকোরো’। জাপান থেকে মিস্ত্রি এসেছিল সেই বাড়ির জন্য স্বেচ্ছাশ্রম দিতে। অচিরেই কোকোরো ‘আমার কুটিরের’ মতো ট্যুরিস্ট ডেসটিনেশন হয়ে উঠতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। নীলাঞ্জন কবি, প্রবান্ধিক, গবেষক, ক্যালিগ্রাফার, এক অঙ্গে ওর অজস্র গুণ। গলায় ক্যান্সারের জন্য নয়-নয়বার অপারেশন হয়েছে তবু ও জীবনের প্রতিটি পল-অনুপল উপভোগ করতে চায়, করতে জানে। নীলাঞ্জন সম্পর্কে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণও একটা আছে। বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, নীলাঞ্জন ছুঁলে ছত্রিশ। ভুক্তোভোগী হিসেবে জানি একবার যদি ও কারও পিছনে লাগে তার জিনা হারাম। তবু নীলাঞ্জন আমার আদরের পাত্র, চল্লিশ বছরে যত ছেলেমেয়ের সংস্পর্শে এসেছি তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান।
একে একে এই নবরত্নের লেখা পেশ করব আমার ওয়েবসাইটে। শীঘ্রই। প্রোফাইলে-প্রোফাইলে এই বার্তা রটানোর জন্য আমি আপনাদের সাহায্যপ্রার্থী।