সুমন চট্টোপাধ্যায়
ব্রাত্য বসুর জন্ম-কুণ্ডলি আমি দেখিনি। তবে এটুকু অনুমান করতে পারি, ওঁর বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। এখন ওঁর ছপ্পর খুলে পাওয়ার কথা, কেবলই পাওয়ার।
তৃণমূলের প্রথম মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বটি চলে যাওয়ার পরে দৃশ্যতই ব্রাত্যর কিছুটা দুঃসময় শুরু হয়েছিল। মন্ত্রিসভা থেকে বাদ না পড়লেও এমন সব দপ্তরের দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হচ্ছিল যাতে তাঁর মোটেই স্বচ্ছন্দ বোধ করার কথা নয়। ব্রাত্য নিজে অবশ্য তা নিয়ে প্রকাশ্যে রা-ও কাড়েননি, যস্মিন দেশে যদাচারের পাঠ তার অনেক আগেই সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
মন্ত্রী-মহোদয়ের ভাগ্যাকাশে ফের সূর্যোদয়ের আভাস পাওয়া গেল সর্বশেষ বিধানসভা ভোটের কিছুকাল আগে থেকে। দেখা গেল, দলীয় কার্যালয়ে বসে তিনি নিয়মিত সাংবাদিক বৈঠক করছেন, গরম গরম কথা বলছেন, দল-বদলুদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ঘাসফুলের পতাকা। সমঝদারো কে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়। বেশ বোঝা গেল তৃণমূলের অনবরত বদলাতে থাকা ‘পেকিং অর্ডারে’ ব্রাত্য বসুর ক্রমান্বয়ে উন্নতি হচ্ছে। ব্লু-চিপ হওয়ার পথে এগোচ্ছে ব্রাত্যর স্টক।
ভোটের ফল প্রকাশের পরে ছবিটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেল। বিকাশ ভবনে পুরোনো চেয়ারে তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘটল, দেখা গেল তিনি দলের অন্দরে ক্ষমতার গর্ভগৃহে প্রবেশাধিকার পেয়ে গিয়েছেন। দল তাঁকে ঘন ঘন ত্রিপুরা পাঠাচ্ছে, ভারী ভারী সব দায়িত্ব দিচ্ছে, মোটের ওপর স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে ভাগ্যে সহসা দুর্যোগের ঘনঘটা শুরু না হলে ব্রাত্য লম্বা রেসের ঘোড়া হয়েই থাকবেন।
রাজনীতিতে চরম উপভোগ্য সুপবনের মধ্যে খবর এল ব্রাত্য এ বার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পাচ্ছেন তাঁর লেখা কয়েকটি নাটকের একটি সংকলন গ্রন্থের জন্য। উইকিপিডিয়া খুলে দেখলাম, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনি, মায় আত্মজীবনীর জন্যও এর আগে অকাদেমি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, নাটকের জন্য হয়নি। কেন হয়নি আমি তা বলতে পারব না, হয়নি বলে কোনও দিন দেওয়া যাবে না এই যুক্তিও অসাড়। এ কথা ঠিক অতীতে অকাদেমি পুরস্কারের যে মর্যাদা ও কৌলীন্য ছিল অনেক দিন হল তা আর নেই স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাহিত্য অকাদেমির গুরুত্বও অনেক কমে গিয়েছে নানাবিধ অযোগ্য, ধান্দাবাজ, রাজনীতি-আশ্রয়ী লোকের অনুপ্রবেশের কারণে। তবু শেষ বিচারে অকাদেমি পাওয়া মানে বাংলা সাহিত্য জগতের দিকপালদের ‘হল অব ফেম’-এ প্রবেশ করা। এই পুরস্কারের প্রথম প্রাপক ছিলেন জীবনানন্দ দাশ, শেষ জন শংকর। মাঝখানে রয়েছেন বাংলা সাহিত্যের হুজ হু -তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সন্তোষ কুমার ঘোষ, গৌরকিশোর ঘোষ, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ইত্যাদি ও ইত্যাদি।
পুরস্কৃত সংকলন গ্রন্থে ব্রাত্যর যে নাটকগুলি আছে আমি তার একটিও পড়িনি। পড়লেও তার মূল্যায়ন করার জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন, আমার তা নেই। ফলে বেপাড়ার রাস্তা দিয়ে আমি হাঁটব না। ব্রাত্য সম্পর্কে আমার বলার কথা দু’টি। এক) তিনি অনবদ্য গদ্যকার, আমি সেই গদ্যের খুবই অনুরাগী পাঠক। দুই) নাটক ওঁর দ্বিতীয় জীবন, তার প্রতি ওঁর ভালোবাসা, আন্তরিকতা আর দায়বদ্ধতা নিরঙ্কুশ। সাম্প্রতিককালে বাংলা নাটক দেখতে যে ফের হল ভর্তি হচ্ছে তার পিছনে ব্রাত্যর অনমনীয় মনোভাব ও সুযোগ্য নেতৃত্বের অবদান অনেকখানি। ব্রাত্যকে কেউ পছন্দ করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন। কিন্তু সত্য যা তা তো সত্য থাকবেই।
ব্যক্তিগত ভাবে আমার কিঞ্চিৎ আনন্দ হচ্ছে এ কথা ভেবে যে বাঙালি পাঠকের সঙ্গে ব্রাত্য বসুর প্রথম আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম। একাডেমি অব ফাইন আর্টসে ব্রাত্যর ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ নাটকটি দেখে আমি মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম। এতটাই যে আনন্দবাজারে বুধবারের একটা গোটা কলম লিখেছিলাম এই নাটকটিকে নিয়েই। বঙ্গীয় সুধীসমাজে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল, তারপরে আর ব্রাত্যকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
আবার কিঞ্চিৎ বেদনাও অনুভব করেছিলাম পরে। ওঁর নাট্যজীবন গড়ে ওঠা, তাতে বিভিন্ন ব্যক্তির অবদান নিয়ে ব্রাত্য কোনও একটি পুজো সংখ্যায় একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তাতে অনেকের নাম ছিল, আমারটাই শুধু ছিল না। নাই থাকতে পারে, কার ঋণ স্বীকার করবে কারটা করবে না সেটা লেখকের এক্তিয়ারভুক্ত। আমার কেবল মনে হয় ব্রাত্য বসু যত ক্ষমতাশালী মন্ত্রী হোন কিংবা প্রতিভাবান নাট্যকার, আসলে তো ‘বাঙালি’।
ব্রাত্যকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন। সঙ্গে ছোট্ট একটা প্রশ্ন, পুরস্কারটি পেলেন কে? আপনি না সিটি কলেজের প্রফেসার্স কমনরুমের একটি চেয়ার?
Right here is the perfect blog for anyone who really wants to understand this topic. You know so much its almost hard to argue with you (not that I really will need toÖHaHa). You certainly put a new spin on a topic which has been written about for ages. Great stuff, just wonderful!