31 C
Kolkata
Thursday, September 19, 2024

আত্মহত্যায় রাশ টানতে মন্ত্রী নিয়োগ

Must read

নিজস্ব প্রতিবেদন: একাকিত্ব মন্ত্রক। মাস তিনেক হল জাপানে তৈরি হয়েছে এই নতুন প্রশাসনিক দপ্তর।

উদ্দেশ্য, অতিমারী পরিস্থিতিতে বেড়ে চলা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং আত্মহত্যার প্রবণতার মোকাবিলা করা। কিন্তু বাস্তবে কতদূর কার্যকরী হবে এই উদ্যোগ?

অনিশ্চয়তা, কাজ হারানো, ঘরবন্দি জীবনে বাধ্য হওয়ার জেরে তৈরি হচ্ছে বিপন্নতাবোধ। দেখা দিচ্ছে উদ্বেগ, অবসাদ। আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। গত দেড় বছরে এটাই ছবি গোটা দুনিয়ার। জাপানের পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ বছরের মধ্যে এই প্রথম উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে আত্মহত্যার হার। শুধু গত বছরের অক্টোবরে জাপানে যত মানুষ আত্মহত্যা করেন, তা ছিল তখনও পর্যন্ত সে দেশে করোনায় মৃতের মোট সংখ্যার চেয়ে বেশি। আর আত্মহত্যার এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে একা থাকা মহিলাদের মধ্যে।

এই সামাজিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার উপায় খুঁজতে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তেতশুকি সাকামোতোকে। মার্চে মন্ত্রকের একটি বৈঠকে ৭১ বছরের সাকামোতো বলেছেন, তাঁদের প্ৰথম কাজ হবে তীব্র একাকিত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার যে সঙ্কট, তার প্রকৃতি ভালো করে বোঝা। তারপর তা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা এবং ইতিমধ্যেই সমাজ থেকে যাঁরা বিচ্ছিন্ন, তাঁদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য উপযুক্ত নীতি নির্ধারণ করা।

করোনা পরিস্থিতির জেরে সবচেয়ে বেশি আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন মহিলারা, বিশেষ করে যাঁরা পরিষেবা ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। এমনিতেই পারিশ্রমিকের অঙ্কে একই পেশায় থাকা পুরুষদের তুলনায় তাঁরা পিছিয়ে। তা ছাড়া এঁদের অনেকে আংশিক সময়ের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। অতিমারী কারও কাজ কেড়ে নিয়েছে, কারও বা রোজগার অর্ধেক হয়ে গেছে প্রায়। এর মধ্যে আবার যাঁরা একা থাকেন, অবিবাহিত, কিংবা সিঙ্গল মাদার, তাঁদের পক্ষে রোজকার খরচ সামাল দেওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাকামোতো বলেছেন, এঁদের সবার কথা মাথায় রেখেই কাজ করবে সরকার।

মনোবিদ এবং সমাজতাত্ত্বিকদের একাংশ কিন্তু মনে করছেন, প্রতিশ্রুতি দেওয়া যতটা সহজ, কাজটা তত নয়। সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তাঁদের একাংশের আশঙ্কা, হয়তো ইতিমধ্যেই অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। কারণ, প্রশ্নটা এখানে শুধু আর্থিক নিরাপত্তার নয়। একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতার শিকড় জাপানি সমাজের অনেক গভীরে। হিকিকোমোরি, অর্থাৎ যাঁরা স্বেচ্ছায় নিজেদের সমাজ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে নেন, তাঁদের সংখ্যা জাপানে অনেক বছর ধরেই বাড়ছে। এখন যাঁদের বয়স চল্লিশ বা পঞ্চাশের কোঠায়, তাঁদের অনেকে এরকমই একা জীবন কাটাতে অভ্যস্ত। যখন স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়ে তাঁদের রোজগার শুরু করার কথা ছিল, সেই সময়টা জাপানের অর্থনীতি ছিল বেহাল। ফলে বেকারত্বও প্রবল। কর্মহীন জীবন আস্তে আস্তে তাঁদের একাকিত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথচ, সরকারের তাতে টনক নড়েনি। তা ছাড়া ইদানিং অনেকেই কোনও স্থায়ী সম্পর্কে না জড়িয়ে একা থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যেও কেউ কেউ ভবিষ্যতে একাকিত্বে ভোগেন। কয়েক দশক ধরে চলে আসা এই সব সামাজিক প্রবণতার সঙ্গে যোগ হয়ে করোনাকালের বাড়তি অনিশ্চয়তা কিছু মানুষকে একেবারে খাদের কিনারায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

কথাটা নেহাত ভুল নয়। জাপানি সমাজে একাকিত্বের সমস্যা অনেক দিন ধরেই আলোচ্য বিষয়। একাকিত্বের বিচিত্র সব সমাধান খোঁজার চেষ্টাও হয়েছে। যেমন কয়েক বছর আগে জাপানি ইঞ্জিনিয়াররা এমন একটি রোবট তৈরি করেছিলেন, যা একাকিত্বে ভোগা কোনও মানুষের হাত ধরে থাকবে, তাঁর পাশে কেউ আছে, এই অনুভূতি দিতে। কড়ি ফেললে ভাড়াটে সঙ্গীও পাওয়া যায় সে দেশে, যিনি অর্থের বিনিময়ে কিছুক্ষণের জন্য একজনকে শুধু সঙ্গ দেবেন। সরকারি ভাবে একাকিত্বকে একটা সামাজিক সমস্যা হিসেবে অবশ্য এই প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া হল।

জাপান একা নয়। নাগরিকদের মন ভালো রাখাও যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব, সেই মতো একটু একটু করে হলেও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে গত পাঁচ-ছ’বছরে। ২০১৮ সালে প্রথম একাকিত্ব মন্ত্রক তৈরি করে ইউকে। তারও দু’বছর আগে দেশের প্রথম সুখ প্রতিমন্ত্রীকে নিযুক্ত করেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। টোকিওর সাম্প্রতিক পদক্ষেপও সেই ইতিবাচক ভাবধারায়। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে সমস্যার সুরাহা পেতে হলে শুধু নীতিতে বদল নয়, বহুমাত্রিক চিন্তাভাবনা করতে হবে সকামোতোর মন্ত্রককে। সবার আগে দরকার, সমস্যার গোড়ায় পৌঁছে নতুন করে কারওর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়াটা ঠেকানো। তা না হলে এই উদ্যোগ নিছক ফাঁকা প্রতিশ্রুতি হয়েই থেকে যাবে।

- Advertisement -

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest article