27 C
Kolkata
Sunday, September 15, 2024

হিজাবকে পিছে কেয়া হ্যায় (২)

Must read

সুমন চট্টোপাধ্যায়

হিজাব রহস্যের কিনারা করে দিয়েছেন পাঁচ প্রতিবাদী ছাত্রীর মধ্যে একজন। নাম লিফা মাহেক। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি অকপটে জানিয়েছেন, এক বছর আগে তিনি যখন স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন, কর্তৃপক্ষ হিজাব নিয়ে কোনও সমস্যার কথা তোলেননি। তার মানে স্কুল প্রাঙ্গনে হিজাব পরে ঘুরে বেড়ানোর ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা তো ছিলইনা, ক্লাসে ঢোকার আগে মুখের আড়াল সরিয়ে ফেলতেও তিনি কোনও অস্বস্তি বোধ করেননি, এমন কিছু অস্বস্তি যার প্রতিবাদ না করে উপায় ছিলনা।

তাহলে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই হঠাৎ তাঁর চিত্তবৈকল্য ঘটে গেল কেন? প্রবীণ সাংবাদিক প্রেম শঙ্কর ঝা ( মোদীপন্থী গদি মিডিয়ার থেকে যাঁর অবস্থান কয়েক আলোকবর্ষ দূরে) বলছেন, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে তার আগে আরও একটি জরুরি প্রশ্নের কিনারা করতে হবে।পয়লা জানুয়ারির ওই সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজক ছিল কারা? যে কোনও সাংবাদিক বৈঠক ডাকার পিছনে একটি সুপরিকল্পিত চিন্তাভাবনা থাকার কথা, ফলে এই সাংবাদিক বৈঠকের উদ্দেশ্যের বিশ্লেষণ হওয়াও প্রয়োজন।

সাংবাদিক বৈঠকে সেই প্রথম জানা গেল পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া নামের এক অজানা ভুঁইফোড় সংস্থা এটির আয়োজক ছিল, কর্ণাটকে যাদের আন্দোলনের অন্যতম এজেন্ডা হল স্কুল কলেজে হিজাব পরার স্বাধীনতা নিয়ে সোচ্চার হওয়া। বিজেপি বিরোধী আরও একটি পোর্টাল দ্য নিউজ মিনিট-এর সূত্রে জানা যাচ্ছে আর এস এসের ছাত্রশাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক প্রতিবাদ সভায় মুসলিম মেয়েদের যোগদান পি এফ আই নেতৃত্বকে অত্যন্ত বিচলিত করে তুলেছিল, তাঁরা তাই স্রোতের মুখ ঘুরিয়ে দিতে কালক্ষেপ না করে ময়দানে নেমে পড়েছিলেন।

এই সি এফ আই আসলে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার ( পি এফ আই) গোপন শাখা সংগঠন। পি এফ আই-য়ের সদর কার্যালয় দিল্লিতে, হিংসা ও সাম্প্রদায়িক অশান্তির অসংখ্য অভিযোগ আছে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে। তারা যে কেবল এন আই এ বা সিবিআই-য়ের আতস কাচের তলায় আছে তা নয় কেরল পুলিশও এই সংগঠনের বিরুদ্ধে অতি তৎপর। ২০১০ সালেই প্রথম পিএফআই-য়ের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসি কাজকর্মের অভিযোগ উঠেছিল, জাতীয় রাজনীতির আকাশে নরেন্দ্র মোদীর উদয় তখনও অভাবিত। সংগঠনটি গোয়েন্দা সংস্থাদের রাডারের তলায় থাকলেও এখনও পর্যন্ত তাকে কিন্তু নিষিদ্ধ করা হয়নি।

২০১৮-র সেপ্টেম্বরে কেরল পুলিশ সি এফ আই-য়ের ১৬ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে এরনাকুলাম মহারাজা কলেজের জনপ্রিয় ছাত্রনেতা অভিমন্যুকে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগে। অভিমন্যু ছিলেন এস এফ আই-য়ের জেলা সভাপতি।দুই ছাত্র সংগঠনের বচসার বিষয়টি ছিল অতি তুচ্ছ, স্লোগান লেখার জন্য কলেজের দেওয়াল দখল। গোটা দেশজুড়েই কলেজ প্রাঙ্গনে এমন মারামারি হামেশাই হয়ে থাকে।

উদিপির সাংবাদিক বৈঠক সি এফ আই-য়ের কোনও গোপন ষড়যন্ত্রের অঙ্গ একথা এখনই বলা যাবেনা, বলাটা উচিতও নয়। কেননা তেমন তথ্য-প্রমাণ এখনও হাতে আসেনি। বিপদটা হল এমন একটি অনাবশ্যক ইস্যুও এদেশে এখন আর কলেজের আঙিনায় সীমাবদ্ধ থাকেনা, চোখের নিমেষে বৃহত্তর বিষাক্ত রাজনীতির অংশ হয়ে ওঠে। কর্ণাটকে ঠিক সেটাই হয়েছে। হিজাব নিয়ে সংগঠিত আস্ফালন শুরু হতেই অনিবার্য প্রতিক্রিয়া স্বরূপ পাল্টা আন্দোলনে নেমে পড়েছে গৈরিক বাহিনী। ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ঠেলায় রাজ্যের পরিবেশ কলুষিত হওয়ার মুখে বিতর্কটি আদালতে চলে যাওয়ায় শাপে বরই হয়েছে। এবার দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় যে রায় দেবে সব পক্ষকেই তা শিরোধার্য করতে হবে।

চোখের সামনে গোটা ভারতবর্ষের প্রায় অর্ধেক ভূখন্ডের রঙ গেরুয়া হয়ে যাওয়ায় যাঁরা নিদ্রাহীন রাত্রি যাপন করেন আর সারাটা দিন অসহায় দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছু করতে পারেননা, কর্ণাটকের হিজাব-কান্ড থেকে তাঁদের একটি জরুরি শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।সব অঘটনের পান্ডা নন্দ ঘোষ হতেই হবে, না হয়ে যায়না, তড়িঘড়ি এমন একটি ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়ে গোটা দেশ জুড়ে হুলুস্হূল পাকানো শুরু করে দেবেননা।তাতে আখেরে ওই নন্দ ঘোষেরই সুবিধে, যত এমন নি-জার্ক রিঅ্যাকশন হবে সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকবে তাদের জনপ্রিয়তা। শাহবানু মামলায় রাজীব গান্ধি সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্টে না দিলে রাম জন্মভূমি আন্দোলন আদৌ দানা বাঁধত কীনা বলা কঠিন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের ফল কী হয়েছিল সেই স্মৃতি তো এখনও টাটকা থাকার কথা। থালায় লাড্ডু সাজিয়ে প্রতিপক্ষের মুখের সামনে তুলে ধরব আর সেগুলি সে টপাটপ গিলে ফেললে তাকে রাক্ষস বানানোর চেষ্টা করব এর চেয়ে আত্মঘাতী কৌশল আর কিছু হতে পারে কী ! (শেষ)

- Advertisement -

More articles

3 COMMENTS

  1. ‘তোষামদ’ বনাম ‘বঞ্চনা’র রাজনীতি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফল। তারই সাম্প্রতিক উদাহরণ — হিজাব পরার স্বাধীনতা ও নিষেধাজ্ঞার সাতকাহন যা দেশের হিতের জন্য কাঙ্ক্ষিত নয়। শক্ত হাতে এর মোকাবেলা করা দরকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest article