বাংলাস্ফিয়ার- হাদি মাতার। সলমন রুশদির উপর হামলা চালিয়ে তিনি এখন রুশদি-বিরোধী দুনিয়ায় হিরো। ২৪ বছর বয়সে সব রকম ভাবে প্রায় ব্যর্থ মাতার এই ভাবে সহজে সাকসেস পেয়ে গেছে। জেহাদি-জগতে মাতার ফুলবেলপাতা পাচ্ছে। আহা সাফল্যের স্বাদই আলাদা। বিশেষত যখন এ স্বাদের নাম সলমন। ‘আরে দাদা রুশদিরই তো দোষ, ব্যাটা ধর্মের বডিতে বিলো দ্য বেল্ট পেন (পড়ুন তলোয়ার) চালিয়েছেন, মানব না, ওকে মারবই তো।’ মাতারের ভাবখানা ছিল এমনটাই।
কিন্তু, মাতারের এই সাফল্যের ভাগ নেবেন না তার আম্মাজান। যেমন রত্নাকরের পাপের ভাগ তার পরিবার নেয়নি। একটি সাক্ষাৎকারে হাদির মা সিলভানা ফিরদৌস জানিয়ে দিয়েছেন, ছেলের সঙ্গে আর কোনও মম্পর্ক তিনি রাখবেন না। জানিয়েছেন, ২৪ বছর বয়সি হাদি ইস্কুলের পড়াশুনো করতে চাইতনা মোটেই। মনটা উড়ু উড়ু, স্বভাবে চাপা, ধম্মোকম্মে মতি। বহু দিন মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে কোনও কথা বলেনি সে, পাছে লেখাপড়াা করার উপদেশ শুনতে হয়।।
বিবাহ বিচ্ছিন্না ফিরদৌস তাঁর তিন সন্তানকে নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই নিউ জার্সির বাসিন্দা। তার আগে থাকতেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। আপাতত, মিডিয়ার মাননীয়রা ভিড় করে রয়েছেন তাঁদের বাড়ির সামনে। হাদি সম্পর্কে তো জানতেই হবে। তাই মাকে ধরো, প্রশ্ন করো। তো মা জানিয়েছেন ২০১৮ সালে হাদি লেবাননে গিয়েছিল।সেখান থেকে একেবারে অন্য মানুষ হয়ে সে ফিরে আসে। গিয়েছিল হাদি হয়ে ফিরে এল মনে মনে জেহাদি হয়ে।
ম্যাজিকাল বদলের যে ট্র্যাজেডি তার রচনা তখন থেকে শুরু হয়ে গিয়েছিল। শুধু মা নয়, হাদির বন্ধু-পরিচিত নানা জনের সঙ্গে কথা বলেছে মিডিয়া। অনেক কিছু জানা গিয়েছে, আরও যাবে নিশ্চয়ই। যেমন হাদি কিছুদিন একটি জামাকাপড়ের দোকানে কাজ করত। লো-প্রোফাইল শপ, কাজেই বেতনও নামমাত্র।তারপরে তার বক্সিং শেখার আহ্লাদ হয়, বক্সিংও শিখতে শুরুও করে। তবে বেশি দূর এগোয়নি সেই মুষ্ঠিযুদ্ধের মহড়া। নিউ জার্সির নর্থ বার্গেনে স্টেট অব ফিটনেস বক্সিং ক্লাবে সেই পাঠ চলেছিল। ক্লাবটি হাদির বাড়ি থেকে ২ মাইল দূরে। বক্সিংয়ে কোনও রকম ব্যুৎপত্তি দেখাতে পারেনি বেচারা। একা একা থাকত সব সময়, চুপচাপ —জানাচ্ছেন জর্গ দিয়া, হাদির সঙ্গেই ক্লাসে তিনি বক্সিং শিখতেন। তিনি বলেছেন হাদিকে দেখে মনে হোত পারলে একই দিনে যেন ও সব কৌশল রপ্ত করে নিতে চায়। ফলে প্রথা-মাফিক স্যাম্পল ক্লাস না করেই মূল ট্রেনিংয়ে ঢুকে পড়েছিল সে, বলেছেন ওই ক্লাবের ম্যানেজার রোসারিয়া ক্যালাব্রেস। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপারটা হল, হামলার তিন দিন আগে হাদি ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে। মাসিক মেম্বারশিপটি ক্যানসেল করে। যে মেম্বারশিপ প্যাকেজ ছিল মাত্র ১৫৮ ডলারের। জানিয়ে দিয়েছিল আর আসতে পারবে না, অতএব টাটা।
এবার আসুন হাদির ন্যাংটো বয়সের বন্ধু কী বলছেন জেনে নিই। উরিয়েল আলবেরদিন তাঁর নাম। হাদির তখন ৮ বছর বয়স আর আলবেরদিনের ১০। দু’জনের তো একেবারে গলায় গলায় বন্ধুতা। সেই আলবেরদিন হাদির হামলার দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত। এ কোন হাদি, তিনি যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেননা। তিনি যে মাতারকে ছেলেবেলায় চিনতেন সে একেবারে অন্য রকম ছিল। কোনও রকম বেগড়বাইয়ের চিহ্নই ছিল না।
কে না জানে মন এক আশ্চর্য ব্যাপার। চুপচাপ রয়েছে কেউ, মানেই সে শান্ত নয়। তার ভিতর হয়তো কোনও আগ্নেয় বিদ্রোহ পাক খাচ্ছে, ঝঞ্ঝা মাথা ঝাঁকাচ্ছে বিক্রমে। অনেক সময় শিক্ষা মানুষকে বিদ্রোহী বানায়, আবার অশিক্ষা তাকে টেনে নিয়ে যেত পারে নিকশ কালো অন্ধকারের মধ্যে। হাদিকে কাছে নিশির ডাক ছিল ওই সেই অন্ধকারটাই। আলোর রাজা রুশদি তাই তার কাছে হয়ে উঠেছিল অনন্ত অসহ্য।
হাদি এই কাজের উৎসাহ কার কাছ থেকে পেয়েছিল, এ কাজের পেছনে শুধু জন্নতে যাওয়ার প্রেরণা কাজ করেছিল না অন্য কিছু…. এসবও জানার ইচ্ছে বাড়িয়ে দিল লেখাটা।
পরধর্ম সহিষ্ণুতার কথা সব ধর্ম-ই বলে, কিন্তু দুঃখের কথা কোনও ধর্ম-ই সে’ পথে হাঁটে না। বরং মুক্তমনা মত ও মানুষের প্রতি তারা অনেক সময় খড়্গহস্ত হয়। তারই সাম্প্রতিক জ্বলন্ত উদাহরণ সলমন রুশদির ওপর নৃশংস আক্রমণ। অন্ধকারের মানুষ/ মত – আলো সহ্য করতে পারে না !