31 C
Kolkata
Thursday, September 19, 2024

পিএনপিসি কিন্তু সস্তায় পুষ্টিকর

Must read

পিএনপিসি কিন্তু সস্তায় পুষ্টিকর

নিজস্ব প্রতিবেদন: ছ’জনের একটা দল। প্রত্যেকের হাতে পড়ে পাওয়া অল্প কিছু টাকা। সামনে খোলা দুটো রাস্তা। নিজস্ব পছন্দ মাফিক খরচ করার জন্য স্বল্প সম্বলটুকু জমিয়ে রাখা, অথবা, সেই টাকা একটা পাত্রে জমা করা, যাতে সবার কাজে লাগে। এঁরা কেউ পূর্ব পরিচিত নন, কিন্তু চাইলে একে অন্যের সঙ্গে গোপনে কথা বলার সুযোগ তাঁদের রয়েছে। এ হেন পরিস্থিতিতে কী ঘটবে?

কতজন নোটের তাড়া আগলে রাখবেন, আর কত জনই বা ‘টাকা মাটি’ বলে জনহিতে তা সঁপে দেবেন, তার হদিস করা কঠিন। চোখ বুজে যেটা বলা যায়, তা হল, আর কিছু হোক না হোক, সবার আগে শুরু হবে গুজগুজ ফিসফাস। অচেনা কয়েকজন মানুষের মধ্যে গড়ে উঠবে যোগাযোগ। আর তার ভিত্তি হবে নিখাদ পরচর্চা (এবং পরনিন্দা)। যাকে সোজা বাংলায় পিএনপিসি বলে।

এই দাবি ডার্টমাউথের দুই বিজ্ঞানীর। গণনাভিত্তিক ও সমাজ-আনুষঙ্গিক স্নায়ুবিজ্ঞান নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণারত লিউক চ্যাং। তাঁর মতে, পরচর্চার নৈতিকতা নিয়ে চর্চা এবং লেখালেখি যত হয়েছে, এর সামাজিক দিকটা গবেষণায় তত গুরুত্ব পায়নি। অথচ এটা এমন একটা কাজ, যা আমরা জেনে বা না জেনে সব সময়েই করে চলেছি। পরচর্চার সামাজিক গুরুত্ব খুঁজতে চেয়ে সম্প্রতি চ্যাং ও তাঁর সহকারী গবেষক এশিন জলি কিছু মানুষকে নিয়ে একটা মজার পরীক্ষা চালান, যেটার কথা শুরুতেই বলা হয়েছে। আর তার ফলাফল দেখে বিজ্ঞানীদ্বয় নিশ্চিত যে, অন্যের জীবন নিয়ে কৌতূহলী জল্পনা বা আলোচনা মনুষ্য নামক জীবটির একেবারে মজ্জাগত।

এই তথ্য অবশ্য নতুন নয়। মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের অনেকেরই মত হল, কথা বলা এবং তারই একটা অংশ হিসেবে পরচর্চারও জন্ম আসলে একে অন্যের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন আর নিয়মিত ভাব বিনিময়ের তাগিদ থেকে। প্রাইমেট, অর্থাৎ উন্নত বানরজাতীয় প্রাণীরা যে পরস্পরের পরিচর্যা করে থাকে, যাকে প্রাণিবিজ্ঞানের পরিভাষায় গ্রুমিং বিহেভিয়ার বলা হয়, তারও মূলে রয়েছে এই একই তাগিদ। সে দিক থেকে পরচর্চার অভ্যাস মানবীয় আদান-প্রদানের বিবর্তনের সূচক।
নির্ভেজাল পরচর্চা অনেক সময় দু’জন অচেনা মানুষের মধ্যে সহজ যোগাযোগের সেতু হয়ে ওঠে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেককে এক সুতোয় বেঁধে দেয় চেনা বা অচেনা কোনও ব্যক্তির চিন্তন ও যাপন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা-আলোচনা। কখনও বা সামাজিক নানা প্রসঙ্গে ঠিক-ভুলের সম্মিলিত বিচার। যেমনটা হয়েছিল চ্যাং ও জলির গবেষণায় অংশ নেওয়া মানুষদের মধ্যে। একান্ত স্বাভাবিক এই প্রবণতাকে নাক উঁচিয়ে উপেক্ষা না করে পরচর্চার সামাজিক সুফলগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে, আখেরে তাই হয়তো লাভই হবে। বিশেষ করে অতিমারীর এই বিচ্ছিন্নতার দিনগুলো অতিক্রম করে যখন আমরা আবার মুখোমুখি বসার দিনগুলোয় ফিরব।

যাঁদের ভাবনা বা কাজ নিয়ে আমাদের আগ্রহ, অথচ ২৪ ঘণ্টা যাঁদের গতিবিধির খবর রাখা সম্ভব নয়, তাঁদের নিয়েই আন্দাজ আর অনুমানের খেলাটা জমে ভালো। পাড়ার বাবলুদার চেয়ে বিল ক্লিন্টনের কেচ্ছা নিয়ে অনেক বেশি মানুষ চর্চা করেন। তা বলে চেনা পরিচয়ের ছোট গণ্ডিটুকুর মধ্যেও উপাদানের অভাব নেই। কারণ, সেখানে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার একটা সরাসরি যোগ থাকে। তাই অন্যকে নিয়ে আলোচনার মধ্যে কোথাও একটা একে অন্যকে চিনে নেওয়ার, বুঝতে পারার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

করোনার কৃপায় এখন অন্য অনেক কিছুর মতো পরচর্চাও ভার্চুয়াল। আর তার ফলে বাদ পড়েছে দুটো জিনিস। গলার স্বরে চলকে ওঠা গোপন তথ্য ফাঁসের উত্তেজনা আর মুখোমুখি আলাপে অটুট গোপনীয়তার আস্বাদ। ফলে পরচর্চা বিষয়টা এখন নেহাত আলুনি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিমারী পরবর্তী সময়ে সামাজিক সম্পর্কের পুরোনো অভ্যাসগুলো নতুন করে ঝালিয়ে নিতে কিন্তু এই পরচর্চাই হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার।শুধু সতর্ক থাকতে হবে, এমন জবরদস্ত হাতিয়ারের যেন ভুল প্রয়োগ না হয়। অলস জল্পনা-কল্পনা যেন বিদ্বেষ বা নিষ্ঠুরতার জন্ম না দেয়। তার জন্য অনন্ত দুটো বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। এক, পরচর্চার অছিলায় এমন কোনও তথ্য পাচার না করা যা অসত্য, ভিত্তিহীন বা কারওর পক্ষে ক্ষতিকারক এবং দুই, পরচর্চার মেজাজটা প্রশংসার হোক বা নিন্দার, পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতাটুকু না হারানো। তা হলেই হয়তো অতিমারী-উত্তীর্ণ পৃথিবীর ছন্দে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার পথটা অনেক সহজ হতে পারে।

- Advertisement -

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest article