শুভেন্দু দেবনাথ
জীবন যে কখন কোনখানে দাঁড় করিয়ে দেয়, তা বোধকরি একমাত্র জীবন ছাড়া কেউ জানে না। শুনেছি অতীত কখনও পিছু ছাড়ে না। আমার জীবনের ক্ষেত্রেও বারে বারে তাই ঘটেছে। কিন্তু আমার জীবনের এই ফেলে আসা দিনের রেশ যে এই করোনাকালেও আমাকে তাড়া করবে ভাবতে পারিনি। এই করোনাকালে বহু বন্ধু-বান্ধব আপনজনকে আক্রান্ত হতে দেখেছি। হারিয়েছি বহু প্রিয় মানুষ, বন্ধু, এমনকী আমার একমাত্র কাছের বন্ধু আমার মাসতুতো ভাইকেও। কিন্তু এসব ক্ষতের মধ্যেও এমন এক ক্ষত রয়েছে যা আজও আমার বুকের ভিতর রক্তক্ষরণ ঘটায়।
রবিবার। আমার কাছে একটা সময় রবিবার মানেই ছিল এক বিশেষ আড্ডা, এক বিশেষ বাড়িতে। মে মাসের শেষ দিকে করোনার প্রকোপ অনেকটাই কম, ফলে আমাদের কাজের চাপও কম। এমনই এক রবিবারের দুপুরে একটু বেলা পর্যন্তই বিছানায় গড়াচ্ছিলাম। এমন সময় ফোন আসে এমন একজনের যা একদমই অপ্রত্যাশিত। কারণ তার ফোন আসে প্রতি বছরের দু’টি নির্দিষ্ট দিনে। মার্থা ডি’মেলো। আমার বুকের ভিতরের এক চিনচিনে ব্যথা এই নামটা। ফোন রিসিভ করতেই চাপা কান্নার শব্দ শুনতে পাই। মার্থাকে অভয় দিয়ে জানতে চাই, ব্যাপার কী। কিছুটা সামলে নিয়ে মার্থা জানায়, তার মেয়ে সোফি এবং তার স্বামী এবং বর্তমান শাশুড়ি কোভিড আক্রান্ত, সিরিয়াস অবস্থা। সে কূল পাচ্ছে না কি করবে। মার্থাকে জানতে হলে সময় পেরিয়ে ফিরে যেতে হবে আমার অন্ধকার অতীতে।
If you missed the train I’m on
You will know that I am gone
You can hear the whistle blow a hundred miles
A hundred miles, a hundred miles
A hundred miles, a hundred miles
You can hear the whistle blow a hundred miles
স্যামসন আমার প্রথম খ্রিস্টান বন্ধু, স্যামসন আমার প্রথম খ্রিষ্ট প্রীতির ভিত। স্যামসন ডি’মেলো। বাড়ি বো ব্যারাক। আদতে ব্রিটিশ আর রাশিয়ানের মিলিত সংস্করণ স্যামসন, বাবা ব্রিটিশ আর মা রাশিয়ান। স্যামসনই আমায় প্রথম কলকাতা চিনিয়েছিল পায়ে হেঁটে। সিগারেটের বাইরে প্রথম নেশায় হাতে খড়ি দিয়েছিল স্যামসনই। চন্দননগরে ফরাসি শিখতে আসত স্যামসন, বয়স আঠারো, আর সেই সময় আমাদের আড্ডা ছিল চন্দনগর স্ট্যান্ডে ঠিক চন্দননগর কলেজের উল্টোদিকের বেঞ্চটায়। কী করে যে ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল জানি না। মনে হয় একদিন স্ট্যান্ডেই আগুন চেয়েছিল। সপ্তাহে দু’দিন আসত স্যামসন। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব বাড়ে, ওই আমাকে নিয়ে আসে নন্দনের আড্ডায়। একে একে ২৫ জনের এক গ্যাঙের সঙ্গে আমার পরিচয়। সকাল সকাল ট্রেনে করে কলকাতা, তারপর পায়ে হেঁটে অথবা অন্য উপায়ে নন্দন। সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আড্ডা। সেই সময় আমাদের গ্যাঙটাও নন্দনগামী মানুষের কাছে দেখবার মতো ব্যাপার ছিল। ২৫ জন ছেলে-মেয়ে সারাদিন গান গাইছে আর নেশা করছে। সারা নন্দন চত্বর মুখরিত, হ্যারি বেলাফন্টে, বব মার্লে, হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া, থেকে শুরু করে অঞ্জন, সুমন, মহীন থেকে মায় রবীন্দ্র সঙ্গীতেও। ওর পাল্লায় পড়েই আমার প্রথম গিটার শেখা, গানের প্রতি ভালোবাসা, মাউথওর্গ্যান বাজানো। আজ সে সব অতীত।
স্যামসন ডি’মেলো, ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির দোহরা চেহারা, লাল চুল, সব সময় ঢুলুঢুলু চোখ। স্যামসন আমার এক অন্য জগতে প্রবেশ করার পাসপোর্ট। প্রথম রেডওয়াইন, প্রথম কোকেন, প্রথম চরস, থেকে প্রথম গাঁজায় টান আমার স্যামসন। কোনো কোনোদিন ট্রেন থেকে নেমে পায়ে হেঁটেই চলে যাই বো ব্যারাক, দুপুর অবধি স্যামসনের বাড়িতে থেকে খেয়ে সেখান থেকে নন্দনে আড্ডা। মিসেস মার্থা ডি’মেলো, স্যামসনের মা, আমার প্রথম এই এত্ত কাছ থেকে দেখা বিদেশিনী। সত্যি বলতে কী বন্ধুর মা হলেও ক্রাশ খেয়েছিলাম প্রচণ্ড। মফস্সলের হাড় হাভাতে ছেলে, চোখের সামনে বিদেশিনী দেখিনি কোনওদিন। অসম্ভব সুন্দরী ছিলেন মার্থা ডি’মেলো, অসম্ভব ভালো পিয়ানো বাজাতেন। রান্না করতেন অসাধারণ, বিফ, পর্ক, আমার অর্ধেক জাত খোয়ানো স্যামসনের বো ব্যারাকে ওই লাল দেওয়ালের বাড়িতেই। বাকি অর্ধেক তো চন্দননগরেই খুইয়েছিলাম।
কানে বাজে এখনও পুরোনো সেই পিয়ানোর ঝঙ্কার
নিকোটিনে হলদে হয়ে যাওয়া দশ’টা আঙুল
সারি বেধে দাঁড়িয়ে এক’শ মাইলের গান’টা
একশ’বার শুনেও একশ’বার হত ভুল
মাঝে মাঝে আড্ডা মারতে যেতে দিতেন না মার্থা আন্টি। আমাকে আর স্যামসনকে আটকে রেখে দিতেন বাড়িতেই। সে সব দিন পিয়ানোয় বসতেন মিসেস মার্থা ডি’মেলো, গিটারে স্যাম আর অসাধারণ স্যাক্সোফোনের সুর তুলতেন স্যামের বাবা মিস্টার ডি’মেলো। রশিয়ান মেমসাহেব, একমাথা চুল পিঠে এলিয়ে দিয়ে ঘাড় দুলিয়ে দুলিয়ে গাইছেন হান্ড্রেড মাইলস, স্যাক্সোফোন, গিটার সবমিলিয়ে পুরো ডি’মেলো পরিবারের সে সব সন্ধেগুলো আমাকে অন্য জগতে নিয়ে যেত। স্যামসনের দাদা আর্থার থাকত অস্ট্রেলিয়ায়। কলকাতায় পড়াশোনা করে সে এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসত গেড়েছে, ছোটো বোন সোফি যেমন সুন্দরী তেমনি গুণবতী। আমাকে মাউথ অর্গ্যান শিখিয়েছিলেন রবার্ট ক্রিস্টোফার ডি’মেলো, স্যামের বাবা। খুব একটা আয় ছিল না পরিবারের, কিন্তু মার্থা আন্টি যেন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা। সারাদিন সবকিছু সামলাচ্ছেন। মাতাল বদরাগী স্বামী, ড্রাগ অ্যাডিক্ট স্যাম, ছোট মেয়ে সোফি, শত সমস্যাতেও একা ধীর স্থির মার্থা।
একবার আমি আমার মফস্সলি ইংরেজিতে, তার চেয়েও খারাপ উচ্চারণে, মনে জোর এনে বলেছিলাম, মার্থা আন্টি, ডোন্ট লুক লাইক আ আন্টি, ইউ আর সো ইয়ং, বিউটিফুল অ্যান্ড ড্যাম গুড সেক্সি। ইফ আই বর্ন সামটাইম আর্লিয়ার দেন আই ওয়াজ প্রোপজ ইউ। বাংলা কথাগুলো প্রথমে মনে মনে ট্রান্সলেট করে, তারপর থেমে থেমে, ঠোক্কর খেতে খেতে বলেছিলাম। হাহাহা করে হেসে উঠেছিলেন অপরূপা সেই বিদেশিনী। তারপর আমার চুল ঘেঁটে স্যামের দিকে চোখ মেরে বলেছিলেন, স্যাম মে আই অ্যাকসেপ্ট দ্য প্রপোজাল? তারপর আমার দিকে ফিরে বলেছিলেন ডার্লিং ফ্রম টুডে আই অ্যাম ইয়োর গার্লফ্রেন্ড, টিল মাই লাস্ট ব্রেথ’।
A hundred miles, a hundred miles
A hundred miles, a hundred miles
You can hear the whistle blow a hundred miles
Lord, I’m one, Lord, I’m two
Lord, I’m three, Lord, I’m four
Lord, I’m five hundred miles away from home
স্যামের বাড়িটাই আমার বাড়ি হয়ে উঠেছিল কবে যেন, স্যামের পরিবার আমার পরিবার। মার্থা স্যামের আপন মা ছিলেন না, সৎ মা। কিন্তু প্রচণ্ড ভালোবাসতেন স্যামকে। আর স্যাম ভালোবাসত তার সৎ বোন সোফিকে। স্যামের প্রাণ ছিল সে। কিন্তু বাবার কারণে স্যাম ধীরে ধীরে ড্রাগসের দিকে ঝোঁকে। আর আমিও তখন আমার বাড়ির সমস্যায় জর্জরিত। ফলে স্যামের কোকেন আর চরসের পার্টনার হতে আমার দেরি লাগেনি। বো ব্যারাকের ওই বিশাল ছাদের এক কোনে গিটার বাজাতে বাজাতে আমি আর স্যাম কোকের সিপ নিতাম (কোক মানে কোকেন, ওই যেমন আপনারা আজকাল সিনেমায় দেখে থাকেন) তারপর একটা জয়েন্ট ধরিয়ে স্যাম আর আমি গিটার আর মাউথ অর্গ্যানের সুরে ভেসে যেতাম। তখন পিছনে পড়ে থাকত আমাদের বাড়ির সমস্যা, কলকাতা শহর, চন্দননগর। আমরা তখন কলকাতার মাথায় বসে গানের সুরে শাসন করতাম কলকাতাকে।
পুরো ক্রিসমাসই স্যামের বাড়িতে আলোঝলমল করত। ঘর পরিষ্কার তকতকে, নতুন জামাকাপড় রেডি। ঘরের ভেতর যে যিশুর মূর্তি আছে তা সাজানো আলো লাগানো। সাধারণত খেতে বসার আগে, সেটা দিনে হোক বা রাতে, স্যামেরা খাবার টেবিলে বসে প্রার্থনা করত, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিত তাদের সেদিনের খাবারের জন্য। ক্রিসমাস ইভে কেনা হত প্রত্যেকের জন্য উপহার। এমনকী আমার জন্যও। এ ভাবেই একদিন জুটেছিল জীবনের প্রথম টাই, একবার জুটেছিল একটা ফারের কোট, যদিও সস্তার, দামি দেবার সামর্থ্য ছিল না ওদের, তবু তাতে এত ভালোবাসা জড়িয়ে থাকত যে তার দাম হয়ে যেত অমূল্য। ক্রিসমাস ইভে ক্যারল গাওয়া হত পরিবারের তরফে –
O come, all ye faithful, joyful and triumphant
O come ye, o come ye to Bethlehem
O come and behold Him, born the King of Angels
O come, let us adore Him
O come, let us adore Him…
কেক আর ওয়াইন খাওয়া হত, আনা হত মাংস, তার মধ্যে ল্যাম্ব থাকত মাস্ট। নানা রকমের রুটি তৈরি করতেন মার্থা আন্টি। আমরা পুরো পরিবার তখন মাতাল। মার্থা আন্টি নাচছে, স্যাম বোনকে নিয়ে নাচছে, নিজের মাকে নিয়ে নাচছে রবার্ট অ্যাঙ্কল। আমাকে নাচের স্টেপ শেখাচ্ছেন মার্থা অ্যান্টি। এক সময় বাবা আমাকে জোর করে নিয়ে চলে গেল দিল্লি, উদ্দেশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে। কিন্তু কলকাতায় এলেই স্যামের বাড়ি যাওয়া আমার বন্ধ হল না।
Not a shirt on my bag
Not a penny to my name
Lord I can’t go back home
This a way
This a way, this a way.
Not a shirt on my bag
Not a penny to my name
Lord I can’t go back home
This a way
This a way, this a way
This a way, this a way
I can’t go back home this ole way
২০১০ এ কোকেনের নেশায় ছটফট করতে করতে স্যাম মারা গেছে। কথা রাখেনি মার্থা আন্টি। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমার গার্লফ্রেন্ড থাকার প্রমিস ভেঙে মাতাল বরের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে চলে গেছেন প্রতিবেশী ড্যানিয়েলের সঙ্গে। বেশি দূর নয়, বো ব্যারাকের লাল বাড়িটার উল্টোদিকের বাড়ির তিনতলায়। সোফি মায়ের কাছেই থাকে। নিজের মাকে নিয়ে একাই থাকেন রবার্ট অ্যাঙ্কল। তবে বাড়িটা আর আগের মতো নেই। স্যাম মারা যাওয়ার পর কমে এসেছে যোগাযোগ। তবে এখনও প্রতিবার কলকাতায় থাকলে ক্রিসমাস ইভে যাই। দেখা হয় সকলের সঙ্গে। দেওয়ালে যিশুর পাশে ছবি হয়ে ঝোলে স্যাম। প্রবল ভাবে বাড়িতে ফিরতে চেয়েছিল স্যাম। প্রবল ভাবে চেয়েছিল তাদের পরিবার যেন এক হয়ে যায়। সব ঠিক হয়ে যায় আগের মতো। কিন্তু স্যামের আর বাড়ি ফেরা হয়নি।
এহেন মার্থা আন্টির ফোন পেয়ে ছুটে যেতেই হয়। ভর দুপুরে বো ব্যারাকের রাস্তায় গিয়ে যখন দাঁড়াই গনগনে আঁচের সূর্য তখন মাথার উপর। বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেন মার্থা, আমাকে দেখেই বিহ্বল হয়ে যান, ‘লুক শুভ্ (আমাকে suv নামেই ডাকেন তিনি) হোয়াট দ্য হেল ইজ গোয়িং অন। সোফি অ্যান্ড হার হ্যাজবেন্ড মাই মাদার ইন ল এভরি বডি গট পজিটিভ। অ্যান্ড আই কান্ট আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট টু ডু।’ আশ্বস্ত করি তাকে, অসুস্থ তিন জনকে দেখি, সোফির মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। আমার হাত চেপে ধরে সোফি। হাতে মৃদু চাপ দিয়ে তাকেও অভয় দিই। সোফির বর আর মার্থার শাশুড়ির অবস্থা ক্রিটিক্যাল। দু’জনকেই হাসপাতালে পাঠাই আমার লোক দিয়ে। সোফিকে আলাদা ঘরে আইসোলেশনে পাঠাই একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার আনিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কনসাল্ট করে। মার্থাকে বলি, চিন্তার কিছু নেই। হাঁফ ছাড়ে মার্থা। জানে আমি চা খেতে ভালোবাসি। আমাকে বসতে বলে চা করতে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় সে।
চা নিয়ে এসে সামনে বসে পড়েন মার্থা, আগের মতোই সুন্দরী আছেন সেই একরাশ খোলা চুল, সেই ধবধবে ফর্সা গায়ের রং। শুধু সামান্য সময়ের দাগ পড়েছে। ঝরনার মতো চুলে কিছু রূপোলি রেখা, চামড়ায় দু চারটে ভাঁজ। বাংলা ইংরেজি মিশিয়ে মার্থা জানতে চান, জীবন কী ভাবে চলছে, বউ কেমন আছে, আমার কথা। আমিও পাল্টা জিজ্ঞাসা করি ড্যানিয়েলের খবর কী, সুখে আছেন তার সঙ্গে? মলিন হাসেন মার্থা। ড্যানিয়েল এখন মুম্বইতে ব্যবসা সূত্রে। বছরে আসে দু’একবার। করোনার সময় অনেক বলাতেও কলকাতায় ফেরেনি সে। মার্থাকেই সব সামলাতে হয়। সংসারের বাঁধনে প্রেম এখন শুধু মাত্র দায়িত্ব আর কর্তব্যে পরিণত হয়েছে।
খুব বেশি কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি না। চোখ চলে যায় দেওয়ালে ঝোলা স্যামের ছবির দিকে। আগে যতবার এসেছি ছবিটা ছিল না। সেই উশকো খুশকো চুল, সেই নেশাতুর চোখ, মুখে সেই হাসি লেগে রয়েছে। আমি চল্লিশের ঘরে পা দিয়ে ফেলেছি অনেকদিন, স্যামের এখনও বয়স বাড়েনি, স্যাম সেই ৩০ এই থেকে গেছে। নিষ্পলক তাকিয়ে থাকি ছবিটার দিকে। ‘I miss him a lot, do you’? মার্থার কথায় চমক ভাঙে, সামান্য হাসি, বলতে পারি না হ্যাঁ ভীষণ, কারণ এই শহরে স্যামের মতো বন্ধু আমার আর কোনওদিন কেউ হয়নি। বলতে পারি না স্যামের মতো করে আর কেউ আমাকে বোঝেনি। বুকের উপর কেমন একটা পাথর চেপে বসে। যেন আমারও অক্সিজেনের অভাব হচ্ছে এই ঘরটার মধ্যে। অস্বস্তি হয় সারা শরীর জুড়ে।
বেশিক্ষণ বসতে পারি না, এটা ওটা কথার পর দ্রুত মার্থাকে বলি আমাকে ফিরতে হবে। অনেক কাজ পড়ে আছে। যে কোনও দরকারে যেন আমাকে ফোন করেন। আমি পৌঁছে যাব। সত্যি বলতে কী আমার কোনও কাজ ছিল না। কিন্তু আজ এখানে বসে থাকতে আমার অস্বস্তিই হচ্ছিল। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রবিবারের আড্ডাগুলো মনে পড়ে যায়, বো ব্যারাকের ছাদ মনে পড়ে যায়, বিবাহিত মার্থার অন্ধকারে ড্যানিয়েলকে চুমু খাওয়ার কথা মনে পড়ে যায়। সকলেই ঘর পেয়েছে, সকলেই ঘরে ফিরেছে, আমার মতো বাউন্ডুলেও। শুধু স্যামের ছবিটা যেন বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাকে, স্যাম বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল কিন্তু তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি কোনওদিন।