Wednesday, October 30, 2024

হাফসোল-১০

Must read

ভরসা দিলেন রফি-কিশোর

অঙ্কিতা ভট্টাচার্য

সে প্রায় এগারো বছর আগের এক ডিসেম্বরের কথা। সবে ষোলোটা বসন্ত একা কাটানোর অহংকার নিয়ে দাপিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। শাহরুখ খানের এক একখানা সিনেমা রিলিজ হয় আর আমার প্রেম সম্পর্কে উচ্চাশা আরও খানিক বেড়ে যায়। সারাদিন ভাবতে থাকি, ঠিক কেমন ভাবে ঘটলে ব্যাপারখানা বলিউড ছবির চেয়েও চমকপ্রদ হবে! এমন সময় হঠাৎ করে তিনি এসে হাজির হলেন। তিনি মানে আর কেউ নন, যার মহাসমারোহে আসার কথা গানে কবিতায় বারবার পেয়ে থাকি আর কী!  প্রথম প্রেম! 

ব্যাপারখানা হলো হঠাৎ। গরমের কাঠফাটা রোদে সারাদিন ঘুরে আসার পর হঠাৎ জ্বর আসার মতো, সেও এলো। সে এক উপাখ্যান। বিকেলে গঙ্গার ধারে ফুচকা খেতে যাওয়া থেকে অঙ্কের স্যারের বাড়ির  রাস্তা- সবদিকেই তখন তার অনায়াস যাতায়াত। আর বারবার চোখে চোখ, দেখা হয়ে যাওয়া থেকে একতরফাই মহা সমারোহ শুরু হয়ে গেলো আর কি। রাস্তায় বেরোনোর আগে একটু চোখে কাজল, বিনুনির বদলে বেশ কায়দা করে চুল বাঁধা, প্রতিদিন একই সময় একই রাস্তা পেরোনোর রুটিন ঠিক করতেই কোথা দিয়ে ছয়টা মাস কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না৷ খালি খেয়াল করলাম, আমি ক্লাসে বসে ভীষণ কঠিন ক্যালকুলাস দেখেও মুচকি মুচকি হাসি। লুকিয়ে লুকিয়ে ডায়েরিতে পদ্য লেখার চেষ্টা করি। আর সারাদিন অদ্ভুত এক ঘোরেই কেটে যায়। শেষমেশ, অঙ্ক টিউশনেরই দুই ভাইয়ের দৌলতে হঠাৎ ফোন নম্বর বিনিময় সুসম্পন্ন হলো। আমার তো তখন বোধহয় দুখানা ডানা গজিয়েছে। উড়ে উড়েই একটা বছর কেটে গেলো। ফোন এলে কথা বলতে হবে এই ভেবেই গলা খুসখুস, পেট গুড়গুড়। হঠাৎ একদিন ভোডাফোনের কী-প্যাডওয়ালা ছোট্ট ফোনে সাহস করে মেসেজ পাঠিয়েই ফেললুম, ‘সুপ্রভাত’। উত্তর এলো না। ‘শুভ রাত্রি’ পাঠালুম। তাও সাড়া নেই। স্কুল যাতায়াতের রিক্সা ভাড়া বাঁচিয়ে ১১ টাকার রিচার্জের থেকে পাওয়া ফ্রি মেসেজের উত্তর না পেয়ে প্রথমে কানেকশন প্রোভাইডরকে গালমন্দ করলেও অনেক পরে বুঝেছিলুম, কোম্পানি মোটেই ফাঁকিবাজি করেনি। যাই হোক। মেসেজের উত্তর পাওয়া গেলো না। এদিকে উত্তরোত্তর আমার সেই পেট গুড়গুড়ানি বেড়েই চলেছে। অনেক ভেবেচিন্তে মেয়েসুলভ ‘পরে বলা’র রাস্তায় না গিয়ে সোজাসাপটা কথা পাড়ার জন্য মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলুম। মিনিট দশেক পর ক্লাব থেকে বেরিয়ে আমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সে হিরো অন্য রাস্তা ধরলো। এমন পালানো দেখে মনের দুঃখে ফিরে এসে দেখি, ছোট্টো কী-প্যাড ফোনটাতে লম্বা মেসেজ। প্রথমত, তার আমায় ভালো লাগলেও সে নাকি আমার উকিল বাবার জাঁদরেল মেজাজের কথা ভেবে কিছুতেই এর চেয়ে বেশি সাহস করে উঠতে পারবে না, আর দ্বিতীয়ত, ইতিমধ্যে আমার উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট শুনে সে একেবারে নিশ্চিত বিজ্ঞানে এত বেশি নম্বর পাওয়া মেয়ের সাথে কোনোদিনও কমার্স পড়া ছেলের কোনওরকম ব্যাপার ঘটতেই পারে না। মেসেজখানা পড়ে অনেক চোখের জলে গাল ভিজিয়ে প্রথমে মনে হলো, আমার বাবার গোঁফখানা না থাকলে বুঝি এত সমস্যা হতোই না। তারপর মনে হলো, এত নম্বর না পেলেও হতো’খন। তবু তো একখানা ব্যাপার হতো। শেষ পর্যন্ত মহা সমারোহেই কিশোর কুমার আর মহম্মদ রফির গানের ভরসাতে জীবনের প্রথম হাফসোলখানা হজম করতে পেরেছিলুম। তবু, সেই বেহিসেবী চুল খুলে রাখার বা কাজল আঁকার দিনগুলো ছিলো বলেই আজ এমন মাথা উঁচু করে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে পারি। প্রথম হাফ সোল থেকে সোলমেট খুঁজে পাওয়া- সবটাই যেন এক একটা অচেনা অধ্যায়। আর জীবন? সুখ-দুঃখের রূপকথা…

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article