- August 13th, 2022
বসে আছি হে
সুমন চট্টোপাধ্যায়
ডেলটা গেল (ভুল হল, পুরোপুরি যায়নি এখনও) ওমিক্রন এল। ওমিক্রন গেলে তারপরে আসবে কেডা?
টাইফুন, হারিকেন অথবা ঘূর্ণিঝড় হলে তার নাম কী হবে, এখনই বলে দেওয়া যেত। কেন না ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাটি যথেষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ। সব দেশই যে যার মতো করে নাম জমা দিয়ে রেখেছে, পালা করে যখন যার সুযোগ আসবে, তখন তার দেওয়া নামটি ব্যবহার করা হবে।
ভাইরাসের নামকরণের প্রক্রিয়াটি কিঞ্চিৎ জটিল। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের তত্ত্বাবধানে বিজ্ঞানীরা এই কাজ করে থাকেন। করুন। আমি বুঝতেপারি না নতুন ভাইরাসের দেখা মিললে একমাত্র গ্রিক ভাষার উপরেই নির্ভর করা হয় কেন? ডেলটা গ্রিক, ওমিক্রনও তাই। একবিংশ শতকের ভাইরাসের নাম অনুসন্ধানে সৃষ্টির আদিতে এইভাবে বারেবারে ফিরে যাওয়া?
আমার মনে হয় ঝড়ঝঞ্ঝার নামকরণের মতো ভাইরাসের নামকরণের প্রক্রিয়াটিও আরও বেশি গণতান্ত্রিক হওয়া উচিত। ১৩০ কোটি মানুষের একটি দেশকে গ্রাহ্যের মধ্যেই আনা হবে না, এ আবার কেমন ব্যবস্থা! কেন নামকরণে কি আমরা অপটু? পশ্চিমবঙ্গের মতো এত বস্তুর এত বাহারি নামের সমাহার এই দুনিয়ায় আর কোথাও আছে? আমি সুযোগ পেলে ওমিক্রনের বদলে ভাইরাসটির নাম রাখতাম ‘খেলা হবে’। সহজ সরল দু’টি শব্দ, উচ্চারণ করতে কারুরই অসুবিধে হওয়ার কথা নয়, হলেও যৎসামান্য। একটু ভেবে দেখুন মানবদেহে প্রবেশ করে ভাইরাসের খেলা দেখানো ছাড়া আর কোনও কাজ আছে? কখনও তার খেলার মাঠ ফুসফুস, কখনও শ্বাসনালী, কখনও স্বাদ-গন্ধ, কখনও তার খেলা আমাদের প্রাণ নিয়েই। ভাইরাস আসলে প্রাণের ঠাকুর, ক্ষেত্র বিশেষে বড়ই নিষ্ঠুর।
কোভিড ভাইরাসের সঙ্গে তিন বছর লুকোচুরি খেলছি, এখনও ধরা পড়িনি। বারবার আরটি-পিসিআরটি, পিসিআর টেস্ট করিয়েছি, প্রত্যেকবার নেগেটিভ। কোভিডের যাবতীয় উপসর্গ নিয়ে আমার গিন্নি দিন চার-পাঁচেক হাসপাতালে আমার কেবিনেই ছিল, বেচারার রিপোর্ট পজিটিভ এল, আমার নেগেটিভ। ঈশ্বর যখন মারেন, খুব নির্মম ভাবে মারেন। তবু তিনি একটি দরজা খোলা রেখে দেন বেঁচে থাকার জন্য। কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ে এতকাল কলার উঁচিয়ে ঘুরে বেড়ানোর পরে এবার মনে হচ্ছে ধরা পড়ে গেলেও যেতে পারি। দু’দিন যাবৎ শরীরটা ভালোই বিগড়েছে, গায়ে জ্বর, কাঁপুনি, প্রচণ্ড দুর্বলতা। আজ সকালে আবার টেস্ট করিয়েছি, আনলাকি থার্টিন হবে কি না বুঝতে পারছি না।
হয় যদি তা হলে কোনটা হবে, ডেলটা না ওমিক্রন? প্রথমটা হলে কেলো কেননা আমার গুচ্ছের কো-মর্বিডিটি আছে। তেমন হলে হয়তো হাসপাতালের শরণাপন্ন হতে হবে। ওমিক্রন হলে অনেকটাই নিশ্চিন্তি। চারদিকের ব্যাপার স্যাপার লক্ষ্য করে যেটুকু বুঝতে পারছি, ওমিক্রন সস্তায় পুষ্টিকর। ডেল্টার তুলনায় নেহাতই অলস, শরীরে প্রবেশ করে সর্বত্র ঘুরে বেড়ায় না। সবচেয়ে বড় কথা ফুসফুসের প্রতি ওমিক্রনের বিশেষ দুর্বলতা নেই। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝক্কি ঝামেলা নেই, তার মানে বেলাগাম খরচও নেই। ওমিক্রন ক্ষনিকের অতিথি, একবার এলে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকে না। হালকা কষ্ট দু’তিন দিনের।
নিউ ইয়র্ক টাইমসে পড়লাম, একবার কারও যদি ওমিক্রন হয়ে যায়, তা হলে আর কোনও ভাইরাস সে দেহে প্রবেশ করতে পারবে না। ডেল্টা-ফে্টা তো চাকর-বাকর।
হঠাৎ মনে হল, ওমিক্রণনে নাম তো মুশকিল আসানও হতে পারত!


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

