- August 12th, 2022
যা হবার তা হবে
নিরানন্দর জার্নাল (৬)
যা হবার তা হবে
সুমন চট্টোপাধ্যায়
Que sera, sera
Whatever will be, will be
The future is not ours to see
Que sera sera
What will be, will be
ডরিস ডে-র এই ভুবনজয়ী গানের কলিগুলি স্মরণ করে নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করছি বারেবারে। What will be, will be/ Que sera sera
স্টোইক দার্শনিকেরা এমন একটি তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন। মার্কাস অরেলিয়াস, সেনেকা, এপিকটেটাস। কী ঘটতে চলেছে, তার উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই যখন, তখন যা হবে সেটাকেই অনিবার্য বলে মেনে নাও। মনে করো, যেটা হওয়ার ছিল, হয়েছে সেটাই। শুধু তাই নয়, যে ভাবে কোনও ঘটনা ঘটবে, তুমি সেটাকে সে ভাবেই দেখতে চেয়েছিলে বলে মনে করো। এই দু’টি কাজ যদি করতে পারো, দেখবে তোমার মানসিক শান্তি কখনও বিঘ্নিত হবে না। যা কিছুই ঘটুক, তোমাকে তা বিস্মিত করতে পারবে না একেবারেই। Que sera sera
একই দর্শন একটু অন্য ভাবে প্রতিভাত হয় রবীন্দ্রনাথে। ‘ভালো-মন্দ যাহাই ঘটুক সত্যেরে লও সহজে’। কিংবা ‘যা হবার তা হবে/ যে আমারে কাঁদায় সে কি ওমনি ফিরে রবে’।
আসলে বিভ্রান্ত, বিমর্ষ, আতঙ্কিত আমি এই মহা-সঙ্কটের সঙ্গে কী ভাবে যোঝা যায় তার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি প্রাণপনে। নানা বই হাতড়াচ্ছি, নানাবিধ পণ্ডিতের লেখা পড়ছি, অন্ধকারে এক চিলতে আলোর দিশাও যদি দেখতে পারি। পারছি না, আন্তরিক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি, বুঝতে পারছি দর্শনের কেতাবে যা অতীব সুখপাঠ্য লাগে, বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে তার থেকে চারা গজায় না। বলা সহজ, যা হবার তা হবে। হয় না, হতে পারে না। যা ঘটছে তাকে হাসিমুখে অনিবার্য বলে ধরে নেওয়া অসম্ভব। যে ভাবে ঘটছে আমি সে ভাবেই বিষয়টি দেখতে চেয়েছি, এ কথা মনে করা তো মহা-পাপ। চাইলেও তাই বলতে পারছি না, que sera sera
আসলে মহামারীতে এমন গণহারে মৃত্যু আমাদের আপাত-নিরাপদ জীবনে আমরা কখনও প্রত্যক্ষ করিনি। আমার বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো এতটা বিস্মিত হতেন না। কেননা তিনি ছেচল্লিশের মন্বন্তরে মানুষের লাশ রাজপথে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন। আমাদের অভিজ্ঞতায় যুদ্ধও অনুপস্থিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাজার হাজার ভারতীয় সেপাই মিত্র শক্তির হয়ে লড়াই করে প্রাণ দিয়েছিলেন কিন্তু যুদ্ধ ভারতে প্রবেশ করেনি। জাপানি বিমান থেকে কলকাতায় দু’চারটে বোমা পড়েছিল, এইটুকুই। আমরা মায়ানমারের মতো জঙ্গি শাসন কখনও দেখিনি, ফৌজের জ্যাকবুটের তলায় পিষ্ট হইনি, খান-সেনার হাতে বাংলাদেশিদের গণহত্যার মতো নারকীয় অভিজ্ঞতাও আমাদের নেই।
আমরা মোটামুটি আপাত-নিরাপদ জীবনযাপন করেছি। যুদ্ধ, গণহত্যা ইত্যাদির মতো ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডির মধ্যে দিয়ে গেলে একটা জাতির মানসিক গঠন যেমন আগুনে পোড়া লোহার মতো হয়ে যায়, আমাদের তা হয়নি। আমরা পেট-রোগা বাঙালি, শীতের হাওয়ায় নাচন লাগার আগেই লেপ-কম্বল বের করে ফেলি, মাথায় মাঙ্কি ক্যাপ চড়াই, জাতি হিসেবে আমরা পুরোদস্তুর ‘হাইপোকন্ড্রিয়াক’। একের পর এক স্বজনের অকালমৃত্যু, হাসপাতালে বেড আর টিকার আকাল, চতুর্দিকে আর্তজনের হাহাকার আমাদের অস্তিত্বের গোড়াটাই নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে। আহাম্মকের মতো আমরা কী করে বলি, যা হবার তা হবে, হোয়াট উইল বি উইল বি, que sera sera?
ডরিস ডে-র গানে একটি বাচ্চা মেয়ে তার মাকে প্রশ্ন করেছিল, বড় হয়ে আমি কি সুন্দরী হব? আমার অনেক টাকা পয়সা হবে? তখনই জবাবে মা বলেছিলেন The future is not ours to see! সৌন্দর্য চাই না, বৈভব তো নয়ই। আমরা শুধু চাই বাতাস থেকে অক্সিজেন নেওয়ার যেটুকু স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে, অকস্মাৎ তা যেন কেউ কেড়ে না নেয়। ব্যস, আমাদের দ্বিতীয় আর কোনও চাহিদা নেই। এইটুকুও কি আমাদের প্রাপ্য নয়?
ছবি- আমেরিকান অভিনেত্রী-গায়িকা ডরিস ডে


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

