- August 16th, 2022
‘চুতিয়া বলিয়া তাকে ডাক ভীমনাদে’
সুমন চট্টোপাধ্যায়
গত চারদিন ধরে আমি ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে আমেরিকা প্রবাসী এক রুশি সাংবাদিকের লেখার অনুবাদ প্রকাশ করেছি। বাংলাস্ফিয়ারের জন্য। সঙ্গে নিয়ম ও অভ্যাস মাফিক লিংকটা দিয়েছি আমার ফেসবুকে। পাঠকের নিরুত্তাপ, নির্লিপ্ত, বরফের মতো ঠান্ডা প্রতিক্রিয়া আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।
তা হলে কি আমার অনুবাদ যথেষ্ট মনোগ্রাহী বা পাঠযোগ্য হলো না? ছাত্রাবস্থা থেকে আমি অনুবাদ করে আসছি। রামশরণ শর্মার প্রাচীন ভারতের ইতিহাস বা সুভাষচন্দ্র বসুর রচনাসমগ্রের প্রথম খণ্ডটি আমি অনুবাদ করি কলেজে ছাত্রাবস্থায়। তারপর সাংবাদিক জীবনের সূচনা-লগ্ন থেকে অনুবাদ করছি তো করছিই। ঠিকমতো হিসেব করলে হয়তো দেখা যাবে আমার অনুদিত বাংলা শব্দের সংখ্যা পঞ্চাশ লাখের চেয়েও বেশি। আমার অনুবাদ নিয়ে কখনও, কোথাও কারও মুখে সমালোচনা শুনিনি আর এই রুশি সাংবাদিকের নিবন্ধটি তো জলবৎ তরলং।
তা হলে?
তা হলে একটি আদিম সত্যের কথাই বলতে হয়, বঙ্গসন্তানের পড়ার অভ্যেস কমতে কমতে এখন প্রায় চলেই গিয়েছে। জীবন তাঁদের এখন কুয়োর ব্যাঙেরও অধম। পশ্চিমবঙ্গ নামক বদ্ধ জলাশয়ের চারপাশের পূতিগন্ধময় আগাছার বাইরে তাঁদের দৃষ্টি প্রসারিত হয় না। বাংলা সমাজমাধ্যমগুলিতে চোখ বোলালে মনে হয়, সফ্ট পর্নোগ্রাফিই সবচেয়ে জনপ্রিয়। কী ভাবে এবং কত ভাবে যৌন-সুড়সুড়ি দেওয়া যায়, নম্বর বাড়ানোর ইঁদুর দৌড় এখন তাই নিয়েই। উদ্ভিন্নযৌবনা নারীর বক্ষ বিভাজিকার ছবি দেখিয়ে, কখনও টলিপাড়ার হিট সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকার রগরগে প্রেম অথবা প্রেম ভাঙার অতিরঞ্জিত কাহিনি লিখে, যৌন-বুভুক্ষু অথবা যৌন-অবদমিত বাঙালির হৃদয়-হরণের চেষ্টার নামই ডিজিটাল সাংবাদিকতা। সেই মধুভাণ্ডের দিকেই লাখ লাখ বাঙালি ছুটে চলেছে মৌমাছিদের মতো।
আমি এবং আমার ব্লগ-সাইট বাংলাস্ফিয়ার এখানে হংসমধ্যে বকযথা। আমরা আবর্জনাকে আবর্জনাই মনে করি, কোন ভ্যাটে কোন আবর্জনা নিক্ষিপ্ত হচ্ছে বাংলাস্ফিয়ারের তা নিয়ে সময় নষ্ট করার সময়টুকুও নেই। এ তাবৎ বাংলাস্ফিয়ার একটি পোস্টও ফেসবুক বা অন্য কাউকে পয়সা দিয়ে বাড়তি লোকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেনি, করবেও না। গাছের কাঁচা আম ইচ্ছে করলে কার্বাইড দিয়ে পাকানোই যায় কিন্তু তার স্বাদ হয় অতীব পানসে। আমরা ‘অর্গানিক গ্রোথে’ বিশ্বাসী, গাছের আম গাছেই পাকবে এর জন্য প্রয়োজনীয় ধৈর্যটুকু ধরতে প্রস্তুত। কৃত্রিম উপায়ে ফললাভের রাস্তায় আমরা হাঁটব না। কেন না আমাদের এমন একটি সম্পদ আছে, যা বাংলাবাজারে অন্য কারও নেই। যেন তেন প্রকারেণ অর্থ-উপার্জন আমাদের অভীষ্ট নয়, মা দুগ্গার দুই মেয়ের মধ্যে সরস্বতীকেই আমাদের বেশি পছন্দ। মা লক্ষ্মী যদি নিজে থেকে সামান্য কৃপাবণ্টন করেন, গরিব তাতেই যারপরনাই সন্তুষ্ট।
অশিক্ষা, কূপমণ্ডুকতা, অবদমিত যৌনস্পৃহার সঙ্গে বাঙালি পাঠকের আরও একটি ব্যাধি আছে যা এই অনুবাদটি প্রকাশ না করলে বোধহয় আরও কিছুদিন আমার অগোচরেই থেকে যেত। বিশুদ্ধ ভণ্ডামি। মনের মধ্যে একটা খটকা ছিল বলেই অনুবাদের কাজটি শুরু করার আগে আমি উৎসাহ পরখ করব বলে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। এতজন সোৎসাহে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, লিখুন লিখুন বলে আমাকে গ্যাস খাইয়েছিলেন তাঁদের এক চতুর্থাংশও চার কিস্তির একটিও পড়েননি। ফেসবুকের পীরিতি তার মানে বালির বাঁধ। ভদ্দরলোকের মুখোশ পরে বিশ্ব ঢপবাজদের নরক গুলজারের আখড়া। অতএব যে সামান্য কয়েকজন কষ্ট করে পড়েছেন, গড় হয়ে তাঁদের পেন্নাম জানাই।
আমি কবি-সাহিত্যিক নই, এ নিয়ে কোনও ভনিতারও আমি ধার ধারিনা। আমি লিখতে ভালবাসি, হরেকরকমবা বিষয়ে আমার আগ্রহ, অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক মণি-মুক্তোয় ভরা, কান্না-হাসির দোল-দোলনায় কেটেছে আমার জীবন, আমি তারই কিছু ঝলক গদ্যে লিখি, লিখে বড় আনন্দ পাই। কবি কবিতা লিখে, সাহিত্যিক গপ্পো-উপন্যাস লিখে, গায়ক গান গেয়ে, চিত্রশিল্পী ছবি এঁকে যে ইন্দ্রিয় সুখ পান, সেটা আমিও পাই। যে দিন মনে হবে পাচ্ছি না, লেখা বন্ধ হয়ে যাবে। যতদিন তা নয়, আমি নিজের আনন্দর জন্যই লিখব। কবে তুমি আসবে বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকব না।


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

