Wednesday, October 30, 2024

অশ্রুজলে ডুবুডুবু শান্তিপুর

Must read

সুমন চট্টোপাধ্যায়

শান্তিপুর ডুবুডুবু নদে ভেসে যায়! কবে থেকে বাঙালি এই লব্জ শুনে আসছে কে জানে! এ বার অকস্মাৎ শান্তিপুরের সঙ্গে ন’দের বিযুক্তি ঘটে গেলে শান্তিপুর ডুবুডুবুই হবে, অশ্রুজলে!

নদিয়া জেলার বিভাজন হলে শান্তিপুর কোথায় থাকবে? প্রশাসনিক বাঁটোয়ারায় শান্তিপুর এখন রাণাঘাট মহকুমায়। সেই অঙ্কে রাণাঘাট নতুন জেলা হলে শান্তিপুরের এই নতুন জেলাতেই আসার কথা। শান্তিপুরবাসী তাহলে ধীরে ধীরে অশান্ত হয়ে উঠছেন কেন? বিশেষ করে কাগজে কলমে যখন স্থিতাবস্থাই বজায় থাকছে?

ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকলে শান্তিপুরবাসীর অশান্তির সুলুক সন্ধান করা অসম্ভব। রাজ্য সরকারের কাছে এটা প্রশাসনিক সুবিধার প্রশ্ন হতে পারে, শান্তিপুরবাসীর কাছে এ প্রশ্ন আবেগের, যার সঙ্গে জড়িত আবার শত শত বছরের পরম্পরা। রাধা আর কৃষ্ণের নাম যেমন একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়, নদিয়া আর শান্তিপুরও তাই। অবিচ্ছেদ্য এই জোড়বন্ধন, একে অন্যের পরিপূরক। শান্তিপুর না থাকা মানে নদিয়ার কলজে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া! একইভাবে নদিয়া না থাকা মানে শান্তিপুরবাসীর কাছে তা হঠাৎ অনাথ হওয়ার সামিল! আপস্টার্ট রাণাঘাটের পরিচয়ে ঢাকা পড়ে যাওয়া সহস্র বছর প্রাচীন এই জনপদ মানতে যাবে কোন দুঃখে? তাদের কাছে এটা অনেকটা যেন সুব্রত বক্সির মন্ত্রিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রীড়ামন্ত্রী হওয়ারই মতো! পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় পুরসভার নাম শান্তিপুর! রাণাঘাট তো এই সেদিনকার ছোকরা। ইগো কেবল মানুষের থাকে তা তো নয়, প্রাচীন, বহু ইতিহাসের সাক্ষী নগরেরও থাকে!

শান্তিপুরী ঐতিহ্যের সেরা আইকন কৃষ্ণবল্লভ প্রামাণিকের প্রাসাদোপম বসতবাটি ও সংলগ্ন বিশাল মাঠটি তাঁর অপগন্ড উত্তরসূরিরা যখন ইসকনকে বেচে দিলেন, সে দিনই প্রথম এই জনপদের বুকে শেল বিদ্ধ হয়েছিল ! রাজ্য সরকারের উচিত ছিল একে হেরিটেজ সম্পত্তি বলে ঘোষণা করা!  কিন্তু কা কস্য পরিবেদনা। ফলে ইসকনের বৈভবের কাছে অর্থলোভ তো নতি-স্বীকার করবেই। 

ওই প্রাসাদ ও সংলগ্ন মাঠে ইসকন মস্ত মন্দির বানাবে। তাদের মতলব, মায়াপুরের মতো শান্তিপুরেও ধীরে ধীরে একচ্ছত্র প্রতিপত্তি বিস্তার করা। শান্তিপুরবাসীকে এবার নগর-কীর্তন দেখতে হবে কপালে তিলক, কাঁধে ঢোল, মুন্ডিত মস্তকে ঝুঁটিধারী গেরুয়া বসন সাহেব-মেমসাহেবদের। হরে রাম হরে কৃষ্ণ সংকীর্তনের কপিরাইট চলে যাবে ইসকনের কাছে, বিনে পয়সায় ঢালাও ভোগ খেয়ে ইসকনের ঢেঁকুড় তুলবে শান্তিপুর। গোটা দুনিয়াকে যারা ভক্তিরসে মজাল, আমাদের বড় গৌরব আর আদরের শান্তিপুর এবার ধীরে ধীরে হবে ইসকনের উপনিবেশ!

সেই গভীর ক্ষতের ওপর  ফের আঘাত এল অকস্মাৎ নদিয়া জেলা বিভাজনের খবরে। আমার হাতে শাসন ক্ষমতা আছে বলে আমি যা খুশি করব, ইতিহাস-ভূগোল কিছুই না জেনে না বুঝে কাঁচি হাতে কাটতে বসে যাব রাজ্যের প্রশাসনিক মানচিত্র, দিনের পর দিন এটা চলতে পারে না। অপরিণামদর্শী ক্ষমতার আস্ফালন বড় বিষম বস্তু, তার সামনে নাগরিক বড় অসহায় !

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article