logo

তাপস পাল

  • August 12th, 2022
Reminiscence, Suman Nama

তাপস পাল

তাপস পাল

সুমন চট্টোপাধ্যায়

তাপস পালের অকাল-মৃত্যু আর পাঁচজনের মতো আমাকেও বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে।তার কারণ এটা নয় যে ওঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল, চিনতাম এই যা। তাপস পাল অভিনীত কোনও ছবিও আমি আজ পর্যন্ত দেখে উঠতে পারিনি।বরং অনেক লোককে যখন বলতে শুনেছি “চরণ ধরিতে দিও গো আমারে” দাদার কীর্তির গান হাসি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিঞ্চিৎ রাগও হয়েছে। তাপস পালকে নিয়ে এখন সর্বত্র উৎসাহের আতিশয্য দেখছি, রাজনীতির পরিচিত চাপান-উতোর শুনছি, সেটাও আমার কাছে বেশ বিরক্তিকর। অবশ্য এটা বঙ্গীয় জাতি-চরিত্রের একটা বড় দুর্লক্ষণ। মৃত্যুর পরে তার মরদেহ ইজরা নেওয়া, টি ভি ক্যামেরার সামনে বিহ্বলচোখে মৃতের সম্পর্কে চারটি অতি-কথন শোনানো এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এই সুযোগে কাদার তাল ছুঁড়ে দেওয়া সবশেষে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে বিদায় জানানো। যাক অকস্মাৎ, অসময়ে এভাবে চলে গিয়ে তাপস ট্র্যাজিক নায়কের মর্যাদাটুকু তো পেল!

তাপসের অকাল মৃত্যুর অনেক কারণ থাকতে পারে, তাঁর ডাক্তাররা সে সব কথা বিশদে বলেছেন। আমাকে যেটা নাড়া দিয়েছে তা হল একটি ছোট্ট খবর। গত পয়লা ফেব্রুয়ারি তাপস মুম্বাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তারপর টানা ছয়দিন ভেন্ট্রিলেটরে ছিলেন অথচ কলকাতায় কাকপক্ষী পর্যন্ত সেটা টের পায়নি। এমন দুর্ঘটনার একটাই মর্মান্তিক ব্যাখ্যা হয়। মৃত্যুর পরে এখন যাঁরা ছলছল চোখে সমবেদনা জানাচ্ছেন তাঁরা সবাই, আবার বলছি তাঁরা সবাই, তাপসকে খরচের খাতায় তুলে দিয়ে তাঁকে বিস্মৃতির অতলে ফেলে দিয়েছিলেন! এই বেদনাদায়ক বিস্মরণের মধ্যেই শেষ অনেকগুলো দিন কেটেছে তাপসের, সম্ভবত সেই অতলান্ত অবসাদ-জনিত অসহায়তাও তাঁর মৃত্যু ত্বরান্বিত হওয়ার বড় কারণ! স্বজন-বন্ধুদের এমন অবহেলা কতটা যন্ত্রণাদায়ক আমার জায়গা থেকে আমি নিজেও সেটা নিজের মতো করে বুঝতে পারছি রোজ। তাপস ছিল একাধারে নায়ক ও রাজনীতিতে প্রথম সারিতে থাকা মানুষ! বিস্মরণের যন্ত্রণা ওর ক্ষেত্রে কতটা মারাত্মক হতে পারে আমি তা বেশ অনুমান করতে পারি। চকিতে একেবারে জন-অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া সেলিব্রিটির পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন, বোধহয় অসম্ভব।

নাড়া খাওয়ার আরও একটা কারণ আছে। ভুবনেশ্বর জেল-হাসপাতালে তাপস ভর্তি ছিল যে বিছানায় আমি প্রথম চার-মাস তার ঠিক উল্টো দিকের বিছানায় কাটিয়েছি।কয়েদখানায় তাপস কী ভাবে দিন কাটিয়েছে আমি তা বিলক্ষণ জানি,কিন্তু সে সব কথা এখানে বলবনা। শুধু এটুকু বলছি এ সম্পর্কে কাগজে যা বেরিয়েছে তার প্রায় পুরোটাই বানানো গপ্পো। দিনে চার/চারবার নুন দিয়ে ভাত খেতে তাপসকে কেউ কোনও দিন দেখেনি।তাছাড়া বন্দী অবস্থায় তাপসের এগারো মাস কেটেছিল হাসপাতালে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাপসকেও আলবাৎ দেখে গিয়েছিলেন! চারদিকে বিভ্রান্তির মধ্যে এই সত্যটুকুও জানা প্রয়োজন!

(ভুবনেশ্বর জেলে বসে লেখা)

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *