logo

হাফসোল-৯

  • August 16th, 2022
Man-Woman

হাফসোল-৯

হাফ-সোল: অসম্ভব!!!

রানী মজুমদার

সেই ছোট্টকালে জেঠুবাবুর সাথে জুতো সেলাই করতে গিয়ে পালিশকাকু জুতোটা খানিক নেড়েচেড়ে বলেছিল, পুরো সোলটাই বদলে ফেলতে হবে! সেই প্রথম জেনেছিলাম চলার পথে পায়ে পায়ে সারাটা সময়ের সঙ্গী আমার পায়ের নীচের এই সোল! কিন্তু হাফ সোল ! ব্যাপারটা কী ???  হুররে! গুগল ট্রান্সলেট। জানলাম জুতোর একমাত্র অংশ যা পায়ের আঙুলের শেষ অবধি প্রসারিত ! কিন্তু হাফ তো আধাআধি ! যারে চলার পথের সঙ্গী ভাবলাম জীবনের মধ্যিখানে এসে সেই ফুড়ুৎ? আর বাকি জীবনটার গোড়ালি খোলা ?

অষ্টম ক্লাসে উঠতি গোঁফের রেখা নিয়েই প্রেমে পড়লাম চন্দ্রনাথের । স্কুলের বন্ধুদের ভিড়কে আড়াল করে যতটুকু যতবার করে দেখে নেওয়া যায় চন্দ্রনাথকে। সৌন্দর্যে তো আলো! এমন নিখুঁত নির্জনতা ! বইয়ের থলে হাতে ডুবে রইলাম অতল মুগ্ধতায়! তপস্যায় বসি এই কোলাহলে? তখন ঘটিখানা গড়িয়ে দিলেও আকাশ ভাঙার শব্দে চমকে উঠবো ! "আমি" ছাড়লাম, তোমাতে সব সমর্পণ । টানটান মাসল আর পুরুষ সুঘ্রাণ! দু’সুতোর underwear এ চেপে রাখা আরাধ্য ! একটা রাত দিতে পারো আমায়? তোমার পুরুষ সুঘ্রাণে আজ ফাগুন মাখবো। আঃ কী গরম ! এতো আগুন রেখেছ ছড়িয়ে ? চলো রাতভর আজ লুটোপুটি খাই! হয়তো কিছু সোহাগ পেটে যাবে...একটু শান্তি দিতে পারো আমায় ? তোমার আগুন-সৌন্দর্যে ঠোঁট রাখব খানিক ..এই যে মাটির উনান, ভাঙা দেওয়ালের ফাটল বেয়ে ডালপালার ধোঁয়া...ফলসার পাতায় পাতায় ভাত ফোটার গন্ধ..….সিঁথি ভরা সিঁদুর পথে  রক্ত-হুল্লোড়! এক ঘরে রাতভর এক বিছানায়…প্যাসিভ অ্যাক্টিভ মানেটা তুমি বোঝো না বন্ধু। পিছন ফিরলেই বুঝি প্যাসিভ ? বোকা ! ঘুমেও মানুষ অ্যাক্টিভ থাকে জানো ?  তুমি পুরুষতন্ত্র আমি  নারীতন্ত্র। তুমি ওপরে আমি নীচে। তুমি কি ভাবলে আমার সবই ডুপ্লিকেট? আমি কিন্তু ঠিকঠাক নারী নই  ....

সকলের আড়ালে তখনও হাফ প্যান্টের সামনেটা শাড়ির কুঁচির মতো তুলে তুলে হাঁটছি!  অন্ধকারে মাদুর পাতা ছাদে হ্যারিকেন আলোয় পড়তে পড়তে সেই চন্দ্রনাথের মুখ ! ক্লাসে টিউশনে সারাক্ষণ পাশাপাশি শুধু রাতটুকুর দূরত্বে অস্থির হতাম। আমি প্রেম করি চন্দ্রনাথ জানেই না। প্রতিদিন সেই এক পুরুষে ফেঁসেছি! চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে আপন মনে হেসেছি! চন্দ্রনাথও একদিন হাসল বটে! সেটা অন্যরকম হাসি! লুটোপুটি খেয়েছে  হাসতে হাসতে। ‘অসম্ভব’!!!

রাত কত কেউ জানে না ।  মস্ত আকাশটাতে শেষ রাতের কিছু আলো লেগে আছে কিন্তু সেই আলো ছড়িয়ে পড়ার আগেই কেমন নিভে নিভে যাচ্ছে। এমন রাতেও কাঠের দুটো পাল্লা হাঁ করে খোলা...খুব নজর করে দেখলে বারান্দার থামে কালো ঝুলের মতো লম্বা একটা আয়না চক চক করছে বটে কিন্তু ওই পর্যন্তই ... বাকিটা অন্ধকার। কেউ কেউ অবশ্য ফিসফিসিয়ে বলেছিল, মেয়ে সেজেছ আর লিপস্টিকটা বাদ রেখেছ কেন? কথাটা মন্দ লাগেনি। কালো কালো ঠোঁটে এমন ঝাপসা-রঙা লিপস্টিক এ তল্লাটে কেউ কখনও দেখেনি। মুখ ভর্তি এলোমেলো সব অন্ধকার রাতদুপুরে কাটাকুটি খেলে আর চোখের জলে ধুয়ে ধুয়ে যায়।
কোথায় তুমি? আমার যে বড্ড ভয় ভয় করছে মা ! কেউ সাড়া দেয় না। চারিধারে কেউ কোথাও নেই.......শুধু কালো স্যাঁতসেঁতে-রঙা লিপস্টিক ঠোঁট বরাবর আরও অনেকটা ছড়িয়ে রইল গুমোট মেঘের মতো। চোখ ভর্তি কাজল আর পেট ভর্তি সোহাগ আগলে আমি লাফিয়ে বেড়াই বিছানা থেকে  খিড়কি.... খিড়কি থেকে  আকাশ! গোড়ালি খোলা জীবনের এলোমেলো পথটা যে মাথার সিঁথির মতো সবুজ নয় সহজ নয়....

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *