logo

শিং নেই তবু নাম তার সিংহ

  • August 16th, 2022
News

শিং নেই তবু নাম তার সিংহ

নিজস্ব প্রতিবেদন: ভূমধ্যসাগরের এক দ্বীপে এক চাষি-চাষি বৌ-র কাছে সন্তানস্নেহে বড় হয়ে উঠছিল এক অনাথ শিশু। একদিন হুশ করে তাকে নিয়ে গিয়ে ওঠানো হল বার্সেলোনার এক প্রাসাদে। মন্ত্রী-সান্ত্রীরা বলতে লাগলেন সে নাকি অতি উচ্চকুলজাত। অতঃপর এলেন এক গোয়েন্দা-প্রবর, ছেলেটির জন্মরহস্য উন্মোচনের উদ্দেশ্যে। পরিণামে যা বেরলো, আচ্ছা আচ্ছা রূপকথাও লজ্জায় মুখ ঢাকবে।

‘ব্যাপার আর কিছুই না মশাই, আমি হলুম গিয়ে রাজামশাইয়ের সন্তান, রাজপুত্তুর।’ লা’ বিসবাল দ্য এম্পোরদা-র এক শুঁড়িখানায় খদ্দেরদের মদ দিতে দিতে বলে উঠলেন আলবেয়ার সোলা। স্পেন আর ফ্রান্স যেখানে পরস্পরকে ছুঁয়েছে, তার উত্তরপূর্ব কোনে ক্যাটালোনিয়া গিরি শ্রেণির মাঝখানে ১০,০০০ এর কাছাকাছি জনসংখ্যার ছোট্ট শহর লা' বিসবাল দ্য' এম্পোরদা।

এই চমকপ্রদ দাবির পক্ষে অবশ্য তেমন কোনও শক্তপোক্ত প্রমাণ নেই। কিন্তু ‘মোরা উচ্চঘর কংসরাজের বংশধর' বলে অধিকার জাহির করা মানুষ কিন্তু আলবেয়ার সোলা-র আগেও কম দেখিনি আমরা। অ্যানা অ্যান্ডারসনের কথাই ধরুন! রাশিয়ার রাজকুমারী অ্যানাসতাশিয়া হিসেবে আত্মপরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁর বাবা, জার দ্বিতীয় নিকোলাস এবং পরিবারের বাকি সক্কলকে বলশেভিক বন্দুকবাজরা খুন করলেও, তিনি নাকি পালিয়ে আসতে পেরেছিলেন, এমনটাই দাবি ছিল তাঁর।

আরেকজনের কথা বলি, ২০০২ সালে প্রকাশিত বিস্ফোরক আত্মকথা 'দ্য রয়াল বাস্টার্ড' (রাজবাড়ির বেজন্মা) লিখে যিনি 'রাজকুমার' উপাধি ব্যবহার করার অধিকারটি ছিনিয়ে নেন। তিনি রাজা অষ্টম আলফোঁসো এবং স্পেনীয় অভিনেত্রী কারমেন রুইজ-এর জারজ সন্তান লিয়ান্দ্রো দ্য বোর্বোঁ।

সোলা সাহেবের দাবিটি সত্যি হোক বা মিথ্যে, তা স্পেনের পূর্বতন সম্রাট, হুয়ান কার্লোসের মাথা ব্যথার কারণ তো বটেই! এমনিতেই লাগাতার কেচ্ছার ঝাপটায় তাঁকে সিংহাসন ছাড়তে হয় ২০১৪ সালে। গতবছর অল্প সময়ের জন্য এক্কেবারে উধাও হয়ে যান। কিছুদিন পর খোঁজ মেলে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে। নানা অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিপুল পরিমাণ বকেয়া কর মেটাতে নাস্তানাবুদ তিনি তখন।

আমাদের কাহিনির নায়ক সোলা কিন্তু বছরের পর বছর নিরন্তর চেষ্টা করে গিয়েছেন তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ছেলে কার-এর এই জমজমাট চিত্রনাট্যে কী নেই! সম্ভাব্য বাবাকে রাজপ্রাসাদের ঠিকানায় চিঠি দেওয়া, টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার, নিজের যুক্তি ও দাবি তুলে ধরতে বই লেখা, ডি.এন.এ. পরীক্ষা করার উপর্যুপরি অনুরোধ করে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, পিতৃত্ব উদ্ঘাটনের জন্য আইনের দ্বারস্থ হওয়া, সে দাবিও খারিজ হয়ে যাওয়া…. তাও আছে। শুঁড়িখানার খদ্দেরদের মনোরঞ্জনের জন্য রং চড়িয়ে সে সব গপ্পো করাটা নাই বা বললুম। রাজপুত্তুর কি না সে তো পরের কথা, তবে 'ক্ষুদে রাজা' উপাধিটি তিনি অনায়াসে আদায় করে নিয়েছেন নেশাসক্ত খদ্দেরদের কাছ থেকে।

সোলা কি সত্যি সত্যিই রাজপুত্র? তাঁর বাড়িতে একটা লালরঙের বাক্স ভর্তি এ সংক্রান্ত কাগজপত্তর। তার মধ্যে দুটো সাংঘাতিক সূত্র পাওয়া যায় এ রহস্যের। ইনগ্রিড সারতিয়াও নামে এক বেলজিয়াম-ললনাও হুয়ান কার্লোসকে তাঁর জন্মদাতা বলে দাবি করেন সোলার মতই, যদিও তাঁদের গর্ভধারিণীরা আলাদা। বেলজিয়ামের এক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে জানা যায় যে তাঁদের দুজনের মধ্যে জিনগত সাদৃশ্য ততটাই যতটা দুই সৎ ভাই-বোনের মধ্যে থাকা সম্ভব। দ্বিতীয় নথিটি হল সোলা সাহেবের জন্মের শংসাপত্র। তাতে জন্মসাল লেখা ১৯৫৬। হুয়ান কার্লোস যদি সত্যিই এই মফস্‌সলি শুঁড়িখানার কর্মচারীটির জন্মদাতা হন, তার অর্থ হল এই যে, ইনি স্পেনের পূর্বতন সম্রাটের জ্যেষ্ঠপুত্র, নিয়তি সদয় হলে যাঁর স্পেনের রাজা হওয়া কেউ আটকাতে পারত না!

প্রখ্যাত লেখিকা, যিনি আবার হুয়ান কার্লোসের জীবনীকারও বটে, সেই রেবেকা কুইন্তান্সের মতে সত্যি হোক বা মিথ্যে প্রসঙ্গটাই স্পেনীয় রাজতন্ত্রের পক্ষে খুব অস্বস্তিকর!

সোলার রহস্যময় অতীত-কাহিনি যতটা ব্যক্তিগত, ততোটাই তাঁর দেশের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রায় তিন লক্ষ শিশুকে অনাথ করে দিয়ে, ১৯৭০ এ শেষ হয় স্পেনের স্বৈরশাসন। এ শিশুরা কেউ কুমারী মায়ের সন্তান, কারও মা-বাবা ঘোর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী পরস্পরের। দত্তক প্রথার জটিল গোলোকধাঁধায় পথ হারানো সেইসব শিশুরা যাতে নিজেদের বাপ-মায়ের পরিচয় খুঁজে নিতে পারে সে জন্য যত রকম ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব, আজকে দাঁড়িয়ে সবই নেওয়ার চেষ্টা করছে স্পেন।

স্পেনের এই তথাকথিত পরিচয়হীন সন্তানদের নিয়ে একটি জনপ্রিয় বই লিখেছেন মারিয়া হোসে এস্তেসো পোভেজ। তিনি এও বলেছেন যে আলবেয়ার সোলো-র দাবিটা নেহাত হতছেদ্দা করার মত নয় কারণ এমন একটা সময়ে তিনি জন্মেছিলেন যখন কোনো নারী 'অবৈধ' সম্পর্কে থেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে, তা সন্তর্পণে গোপন করতেন, কোনোরকমে সন্তানের জন্ম দিয়েই তাকে অন্য পরিবারে চালান করে দিতেন, সন্তানের কোনও দায়দায়িত্ব স্বীকারই করতেন না।

স্বয়ং গর্ভধারিণী অস্বীকার করলে কী হবে, এল দ্রাক নামক শুঁড়িখানার মালিক ম্যানুয়েল মার্টিনেজ থেকে খরিদ্দাররা সক্কলেই নিঃসংশয় ছিলেন আলবেয়ার সোলার রাজকীয় উত্তরাধিকারের যাথার্থ নিয়ে।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার গত ২৫ জুন সোলে-কে নিয়ে যে প্রবন্ধটি লেখেন নিকোলাস ক্যাসি এবং হোসে বাউতিস্তা, সেখানে কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন রাজপরিবারের মুখপাত্র। তবে স্পেনের সংবিধান সোলা সাহেবের মত একজন স্বঘোষিত স্বীকৃতিহীন রাজপুত্রকে দেশের সিংহাসনের অধিকার দেবে বলে মনে করেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

আলবেয়ার সোলা সংশয়হীন ভাবে নিজেকে রাজপুত্র মনে করেন অনেকটাই তাঁর চেহারার কারণে। তিনি কার সন্তান তার উত্তর খোদাই করা আছে তাঁর টিকোলো নাক, কোটরাগত চোখ আর অভিজাত মুখমণ্ডলে।অনেকের মতেই, হুয়ান কার্লোসের হুবহু প্রতিচ্ছবি দেখা যায় সোলার চেহারায়।

তবে শুধু চেহারা নয়, আরও অনেক কিছুই ছেলেবেলা থেকেই সোলাকে আলাদা করেছিল অন্যান্য অনাথ পালিত শিশুদের থেকে। তাঁর আসল নামটি ছিল যেমন বড়, তেমনি অভিজাত। আলবের্তো ফারন্যান্দো অগাস্টো বাখ রামোন। জন্মের অল্পদিনের মধ্যেই বার্সেলোনা থেকে তাঁকে ভূমধ্যসাগরের স্পেনীয় উপকূলের ইবিজা দ্বীপে নিয়ে আসা হয়, এক গ্রাম্য খামারবাড়িতে বড় হতে থাকেন সোলা।

নবতিপর ইউলালিয়া মারি-র অধুনামৃত মা সে সময়ে ছোট্ট সোলাকে দেখাশোনা করতেন। সে সময়ে শহর থেকে প্রায়ই অনাথ, স্বীকৃতিহীন শিশুদের পাঠানো হত বড় করে তোলার জন্য। তাদের মধ্যেও আলবেয়ার সোলা ছিলেন সব্বার চেয়ে আলাদা। তাঁকে বড় করে তোলার জন্য প্রতিমাসে প্রায় ৩০০ পিসিটা করে দেওয়া হত, অন্যান্য ক্ষেত্রে যা দেওয়া হত তার প্রায় দ্বিগুণ!

১৯৬১ তে বার্সেলোনা ফেরেন সোলা। বার্সেলোনার বেশ কিছু আবছা স্মৃতি এখনও রয়ে গেছে তাঁর। প্রাচীরঘেরা প্রাসাদোপম বাড়ি ছিল, বাগান ছিল, একজন মাস্টারমশাই পড়াতে আসতেন দিনের বেলা, এক প্রৌঢ়া আসতেন দেখা করতে, খেলনাপাতি উপহার দিতে, এখন মনে হয় তিনি বোধহয় সে শিশুর পিতামহীই ছিলেন।

আট বছর বয়সে আবার স্থানান্তরিত করা হয় সোলাকে, ফ্রান্সের সীমান্তের কাছে গিরোনা প্রদেশের এক কৃষক পরিবারে। গৃহকর্তার নাম সালভাদর সোলা। দরিদ্র কৃষক পরিবার, কিন্তু সোলার ষষ্ঠেন্দ্রিয় বলতো তাঁকে দেখাশোনার খরচ বাইরে থেকে অন্য কেউ যোগাচ্ছে। গাড়ি চালাতে শেখার পর, বেশ রহস্যজনকভাবে দামি মোটরসাইকেল ও গাড়ি উপহার পান সোলা। কুড়ি বছর বয়স হলে বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক চাকরিতে যোগ দিতে হত, সেখানেও তাঁকে বেশ পক্ষপাত দেখানো হচ্ছে, টের পেতেন আলবেয়ার সোলা।

কেন এই অগ্রাধিকার, কেন সবার থেকে আলাদা ব্যবস্থা তাঁর জন্য? একসময়ে উত্তর খুঁজতে শুরু করেন তিনি। বার্সেলোনার যে দপ্তরে শিশুদের দত্তক দেওয়া-নেওয়া সংক্রান্ত নথিপত্র রক্ষিত হত, সেখানে খোঁজ নিতে যান ১৯৮২ তে। অধিকর্তা মহাশয় সহযোগিতা করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেও বেশ কৌতুক সহকারে জানান যে সোলা-র দত্তক প্রক্রিয়াটি ছিল তাঁর দফতরের ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল প্রক্রিয়া।

১৯৯৯ নাগাদ থেকে তিনি মেক্সিকোতে বসবাস করতে শুরু করেন। সোলা সাহেব নিশ্চিতভাবেই কোনও ক্ষমতাশালী পরিবারে জন্মেছিলেন, এমন অভিমত ছিল সেখানকার কূটনীতিকদেরও। অবশেষে সেখান থেকে স্পেনে ফিরে আসেন তিনি, তাঁর জন্মের নথিপত্র পরীক্ষা করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে জজসাহেব নাকি জানিয়ে দেন যে তিনি নিশ্চিত ভাবে তৎকালীন রাজা হুয়ান কার্লোসের পুত্র। সোলার মতে, এই ঘটনার মধ্য দিয়েই কিস্তিমাত করেন তিনি। যদিও জর্জ মাজা নামের সেই বিচারক অবসরের পর এক সাক্ষাৎকারে এই ঘটনাটিকে সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করেন। ফলে, সোলা-র আত্মপরিচয়ের দাবিটি আবার সন্দেহের মেঘে ঢাকা পড়ে যায়।

২০০৭ এ নিজের দাবি নিয়ে সরাসরি হুয়ান কার্লোসের কাছে পৌঁছোন সোলা। রাজামশাইয়ের বাসস্থান জারজুয়েলা প্রাসাদে ফ্যাক্স করে একটি চিঠি পাঠান তিনি। হাতে লেখা সেই চিঠিতে রাজাকে সম্বোধন করেন 'প্রিয় বাবা' বলে। তাঁকে চমকে দিয়ে জবাবও আসে সে চিঠির। রাজকীয় আচরণবিধি অনুযায়ী হুয়ান কার্লোসের নাম-ঠিকানা সম্বলিত কাগজে উত্তর দেওয়া হয় যে চিঠিটি মহামান্য রাজামশাইয়ের কাছে পৌঁছেছে। এইটুকুতেই আহ্লাদে আপ্লুত হন সোলা, শুরু হয় প্রতীক্ষা, রাজার চিঠির। দিন যায়, চিঠি আর আসে না। এদিক থেকে একের পর এক চিঠি পাঠাতে থাকেন সোলা, চিঠির ভাষা উত্তরোত্তর কর্কশ হতে থাকে। ‘আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে বসেছে। কিছু অন্তত লিখুন, আর বিরক্ত করব না আপনাকে।’

এই সময় নাগাদ সোলা-র সঙ্গে একজনের আলাপ হয়। তিনি স্পেনীয় গোয়েন্দাসংস্থার গুপ্তচর হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন সোলার জন্মরহস্যের যে ব্যাখ্যা সোলা দেন, তাতে তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা আছে। পেশাগত কারণে পরিচয় গোপন রাখলেও নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদককে তিনি জানান যে তাঁর সহকর্মীরা হুয়ান কার্লোসের মায়ের সঙ্গে বালক আলবেয়ার সোলা-র খেলা করার ছবি দেখেছেন। সোলার ধারণা ইনিই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন বার্সেলোনার অট্টালিকায়।

রহস্যের চাদরে ঢাকা সোলা-র জন্মকাহিনি তাঁর রোজকার জীবনযাপনকে একটুও পাল্টাতে পারেনি। আজও তিনি শুঁড়িখানায় মদ বিতরণ করেন। এল ড্র‍্যাক ছেড়ে এখন কাছাকাছি অন্য এক মদের দোকানে চাকরি নিয়েছেন। সেই খবর স্থানীয় সংবাদপত্রে বেরতে না বেরতে রাজপুত্রের সঙ্গে সেল্ফি তোলার লোভে মদ-পিপাসু মানুষের ঢল নামে সেই দোকানে। তাঁর নিজের জবানিতে, ‘জানি না আমার গল্প না আমার চেহারার কারণে, কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দেখা করেন আমার সঙ্গে, বিশ্বাস করেন আমি সত্যিকারের এক রাজপুত্র।’

যে দেশের মহাকাব্যের নায়কদের প্রায় সক্কলেরই জন্মকাহিনি রহস্যের আবরণে আবৃত, সে দেশের মানুষ হিসেবে আলবেয়ার সোলা-কে ভারী আপনজন বলে মনে হয় আমাদের। ভাবতে ইচ্ছে করে, তাঁর আত্মপরিচয় স্বীকৃতি পাক, গ্রাম্য শুঁড়িখানা থেকে রাজধানীর রাজপ্রাসাদে তাঁর যাত্রা সুগম হোক, অপরের দয়াদাক্ষিণ্যে বেড়ে ওঠা মানুষটিকে কাছে টেনে নিক তাঁর সত্যিকারের আপনজনেরা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *