logo

এই দুনিয়ায় ভাই সবই হয়, সব সত্যি

  • August 16th, 2022
Health World

এই দুনিয়ায় ভাই সবই হয়, সব সত্যি

এই দুনিয়ায় ভাই সবই হয়, সব সত্যি

নিজস্ব প্রতিবেদন: সকালে সদ্য ঘুম ভাঙা তীব্র অবসাদ অথবা রাতদুপুরে প্যানিক অ্যাটাক, যদি হাত বাড়ালেই সঙ্গে সঙ্গে মেলে সাহায্য? উদ্বেগ, অবসাদের মতো সমস্যায় ২৪ ঘণ্টা আপনাকে এবং শুধুমাত্র আপনাকেই পরামর্শদেওয়ার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ হাজির থাকেন মুঠোফোনে?

তবে বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় কোনও মানুষ নয়, থাকবে একটি চ্যাটবট অ্যাপ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কাজে লাগিয়ে সে পড়ে নেবে আপনার মন। মিনিট দশেকের কথাবার্তায় আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে ঠিক কোন ভাবনাগুলো আপনাকে ঠেলে দিচ্ছে নেতিবাচক আচরণের দিকে। আর পরামর্শ দেবে ইতিবাচক হয়ে উঠতে ঠিক কী ভাবে আপনি নিজেই হতে পারেন নিজের সবচেয়ে বড় ভরসা।

উওবট, ওয়াইসার মতো কিছু অ্যাপ ইতিমধ্যেই মার্কিন মুলুকে বেশ পরিচিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর ভিত্তি করে তৈরি এই চ্যাটবটগুলি মানুষকে সাহায্য করে নিজের চিন্তা, আবেগ ও আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে মানসিক সমস্যার সমাধান খুঁজতে, যা আসলে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপির (সিবিটি) প্রয়োগ। ব্যবহারকারীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কিন্তু যতই শিখিয়ে পড়িয়ে তৈরি করা হোক, একটা যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সত্যিই কি মানুষের মনের জটিল অলিগলির ঠিকানা পাওয়া সম্ভব?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং উওবট হেল্‌থের প্রতিষ্ঠাতা অ্যালিসন ডার্সির বক্তব্য, মনোবিশ্লেষক হিসেবে একজন মানুষের বিকল্প হয়ে ওঠা এই ধরনের অ্যাপের উদ্দেশ্য নয়। বরং মানসিক সমস্যায় সাহায্য পাওয়ার সুযোগটা অনেক বেশি মানুষের কাছে এই ভাবে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। অতিমারী পরিস্থিতিতে স্ট্রেস, উদ্বেগ, অবসাদের মতো সমস্যা বাড়ছে গোটা পৃথিবী জুড়ে। কিন্তু তা সামাল দেওয়ার উপযুক্ত মানসিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নেই। বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। পেশাদারি সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের কাছেই এর উপর বাড়তি মাথাব্যথা সময় এবং খরচ। উওবটের মতো অ্যাপের মাধ্যমে তার কিছুটা হলেও সুরাহা হতে পারে।

এলি স্পেক্টরের মতো ব্যবহারকারীরা এর সঙ্গে যোগ করেছেন আরও একটি দিক। তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, অচেনা বা অল্প চেনা একজন মানুষের কাছে নিজেকে মেলে ধরার কাজটা অনেক সময় সহজ হয় না। অথচ, চ্যাটবটকে মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে বা আশঙ্কাগুলোর কথা বলে ফেলা যায় অনায়াসে। তা ছাড়া মানসিক সমস্যা নিয়ে যে সামাজিক বাধা ও কলঙ্কের ভয় এখনও নির্মম বাস্তব হিসেবে টিকে রয়েছে, তার মুখোমুখি হওয়া থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের বেশিরভাগই এ বিষয়ে ডার্সির সঙ্গে একমত যে, মানসিক সমস্যায় সাধ্যের মধ্যে সাহায্য পাওয়ার সুযোগ দরকারের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু তার সমাধান কী করে হবে, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। এক দল বলছেন, কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও চ্যাটবট এ ক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারে। অন্য দলের মত, কাউন্সেলিং-এর জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে গোড়াতেই একটা গন্ডগোল রয়েছে। একজন মনোবিশ্লেষক এবং মানসিক সমস্যা নিয়ে তাঁর দ্বারস্থ হওয়া ব্যক্তির আলাপচারিতায় মানবিক ছোঁয়া থাকাটা অপরিহার্য। চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে যে থেরাপিউটিক রিলেশনশিপ বা পারস্পরিক সহযোগিতা ও নির্ভরতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তা চ্যাটবটের ক্ষেত্রে সম্ভবই নয়। আর সেই কারণেই শুধু যান্ত্রিক প্রশ্নোত্তর আর যন্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী চিন্তাভাবনার অনুশীলন কারওর দীর্ঘ দিনের অভ্যস্ত আচরণ বা ধরন-ধারণ বদলে দিতে পারে না। বরং আগে থেকেই নির্দিষ্ট হয়ে থাকা বাঁধাধরা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বা ইমোজি ও ছবির মাধ্যমে মনের ভাব জানানোর মতো কাজগুলো ব্যবহারকারীদের কাছে অনেকটা মোবাইলে গেম খেলার মতো হয়ে ওঠে, যার মূল আকর্ষণ তার সহজলভ্যতা।

মজার কথা হল, যাঁরা এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করেছেন, তাঁদের অনেকে কিন্তু বলছেন, চ্যাটবটের সঙ্গেও তাঁদের একটা সাময়িক নির্ভরতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কোনো কোনো সময় নাকি এমনও মনে হত যে, উল্টোদিকে কোনো যন্ত্র নয়, একজন মানুষ রয়েছেন। কী করে বাস্তব অভিজ্ঞতার এতটা কাছাকাছি চলে আসছে একটা যান্ত্রিক ব্যবস্থা? উত্তর ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং। অর্থাৎ কেউ যখন কথা বলছেন, তিনি কী ধরনের শব্দ বা অভিব্যক্তি ব্যবহার করছেন, তা বিশ্লেষণ করেই তাঁর সেই মুহূর্তের মন মেজাজ সম্পর্কে চট করে ধারণা করে নেয় চ্যাটবট। সেই অনুযায়ী চলতে থাকে একের পর এক প্রশ্ন করা বা পরামর্শ দেওয়ার পালা। যেমন, কারও কথায় যদি আত্মহত্যা প্রবণতার আভাস পাওয়া যায়, বট তখনই তাঁকে জানিয়ে দেবে যে এই পরিস্থিতিতে কেবল একজন সত্যিকারের কাউন্সেলরের পক্ষেই সাহায্য করা সম্ভব।

ব্যবহারকারীর কথাবার্তা থেকে দরকারি তথ্যগুলো বটের মেমরিতে জমা হয়ে যায় এবং পরের কথোপকথনের সময় কাজে লাগে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যান্ত্রিক সঙ্গী আরও ভালো করে 'বুঝতে' শুরু করবে তার ব্যবহারকারীকে। বেশিরভাগ সময় অবশ্য ততদিনে বট থেরাপির খামতিগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন, ভাষার বিচার করতে পারলেও ভাবভঙ্গি কিংবা কণ্ঠস্বরের সূক্ষ্ম ওঠপড়াগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নাগালের বাইরে। তাই কখন তার প্রশ্নে ব্যবহারকারী অস্বস্তি বোধ করছেন, কখন বিরক্ত হচ্ছেন, শরীরী ভাষায় কোন না বলা কথা বোঝাতে চাইছেন, সেগুলোর হদিস পাওয়া চ্যাটবটের কম্মো নয়। একটা পর্যায়ের পর এই ছকে বাঁধা কথাবার্তা তাই ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে এবং ব্যবহারকারীরা ঝটপট অ্যাপটা ফোন থেকে মুছে ফেলে হাঁফ ছাড়েন।

তবু মানসিক সমস্যার সমাধানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গুরুত্ব উড়িয়ে দেওয়ার সময় আসেনি, মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। পরিসংখ্যান বলছে, টিনএজার থেকে কলেজ পড়ুয়ারা অনেকেই উওবটের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে উপকার পেয়েছেন। সদ্যপ্রসূতিদের অবসাদ কমাতেও কিছু ক্ষেত্রে বট থেরাপি সফল। এ নিয়ে তাই আরও গবেষণার সুযোগ রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন আজ ব্যাপক আকার নিয়েছে, তেমনই হয়তো অদূর ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নতুন কোনও সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *