logo

সেমসাইড খেলেছেন শিক্ষামন্ত্রী

  • August 16th, 2022
News

সেমসাইড খেলেছেন শিক্ষামন্ত্রী

সুমন চট্টোপাধ্যায়

কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর কথা যাঁর তাঁর নামটি কেউ উচ্চারণই করছেন না। সম্ভবত সিলভিয়া প্লাথের সমতুল এক বাঙালি মহিলা কবিকে রাজ্য আকাদেমি পুরস্কার দেওয়ার পরে স্তাবকদের ‘পেকিং অর্ডারে’ তাঁর নামটি ইদানীং একেবারে উপরের দিকে উঠে আছে বলে। তদোপরি তিনি ‘এয়ার অ্যাপারেন্টের’ ঘনিষ্ঠ বলয়ের লোক, নিজস্ব বশীকরণ মন্ত্রে তাঁকেও তিনি বশে এনেছেন দিব্য। এমন পারিষদ-শ্রেষ্ঠের ইমিউনিটি কোভিডের ইমিউনিটির চেয়েও অনেক বেশি।

রবীন্দ্রভারতীর নতুন উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে শাসক বনাম রাজ্যপালের নতুন করে যে ঠোকাঠুকি শুরু হয়েছে তাতে সত্য রাজভবনের পক্ষে। রাজ্যপালকে পছন্দ করি বা না করি, এক্ষেত্রে তাঁর এক ছটাক দোষ আছে বলেও মনে করি না। মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করা সংক্রান্ত বিল এখনও আইনে পরিণত হয়নি, যতক্ষণ না হবে ততক্ষণ রাজ্যপালই থাকবেন আচার্য হিসেবে। রবীন্দ্রভারতীর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে তাঁর যা করণীয় ছিল তিনি ঠিক সেটাই করেছেন। নিয়ম মেনে, প্রথা মেনে। সেটা সংক্ষেপে এই রকম।

রবীন্দ্রভারতীর নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য যে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছিল তারা গত ৯ জুন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তিনটি নাম চূড়ান্ত করেন। সার্চ কমিটি নিয়োগ করে কে? রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তর। সেই দপ্তরকেই সার্চ কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। তার ঠিক পক্ষকাল করে সার্চ কমিটির রিপোর্ট রাজ্যপালকে আচার্য মেনে রাজভবনে পাঠান কে? অন্য কেউ নন, শিক্ষামন্ত্রী, কেন না এটা তাঁরই কর্তব্য। রাজ্যপালকে আচার্য সম্বোধন করে তিনি নিজের নোটে লেখেন, এই তিন জনের মধ্যে যে কোনও এক জনকে ধনকড় নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করতে পারেন। কোনও বিতর্কের মধ্যে না গিয়ে রাজ্যপাল সার্চ কমিটির রিপোর্টে থাকা প্রথম নামটিই মনোনিত করেন। এক্কেবারে ষোলো আনা নিয়ম মাফিক, কপি-বুক স্টাইলে।

তার মানে সংক্ষেপে বিষয়টি দাঁড়ায় এই রকম, রাজ্যপাল এক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে কিছু করেননি, তিন জনের মধ্যে দ্বিতীয় বা তৃতীয়জনকে বেছে নিয়ে গোল পাকাতেও চাননি, শিক্ষামন্ত্রী লিখিত ভাবে যা সুপারিশ করেছেন সেটাই মেনেছেন। এখন প্রশ্ন তাঁর দল যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে অর্ধচন্দ্র দিতে চেয়ে বিধানসভায় বিল পাশ করেছে তখন মহামান্য শিক্ষামন্ত্রী এই সেমসাইড খেলাটি খেললেন কেন? দোলনমায়া না কাটায় তিনি কি রাজ্যপালকে সুপারিশ করার সময় দলের অবস্থানের কথা ভুলে গিয়েছিলেন নাকি এ ভাবেই তিনি ‘জেহাদ’ ঘোষণা করলেন নিজের দলের বিরুদ্ধেই? নিজের মতো করে চলতে গিয়ে একবার শিক্ষা দপ্তর খুইয়েছিলেন যিনি তাঁর কি প্রয়োজনীয় শিক্ষা হয়নি? এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে তিনি সত্যকে অস্বীকার করছেন কেন, কেনইবা তাঁর দলের মুখপাত্রবৃন্দ আসল বিষয়টি না বুঝেই রাজ্যপালকে গালমন্দ করছেন আর বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এই অবাঞ্ছিত বিতর্ক তৈরি হওয়ার কারণ শিক্ষামন্ত্রী, সত্যকে প্রকাশ্যে কবুল করার দায়ও তাঁর। দলীয় অবস্থানের বাইরে গিয়ে তিনিই রাজ্যপালকে আচার্য মেনেছেন আর এখন বিষয়টিকে গুলিয়ে দিতে বলে বেড়াচ্ছেন রাজ্যপালের উচিত ছিল এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী অথবা তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করার। শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে অযাচিত লিখিত সুপারিশ পাওয়ার পরে আবার তাঁর সঙ্গে রাজ্যপাল কেন কথা বলবেন? রাজ্যপালের বাকি কৃতকর্ম যাই হোক তিনি তো শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির চাকর নন!

আরও একটি গর্হিত অপরাধ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী যা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও আলোচনাই হয়নি। রবীন্দ্রভারতীর বিদায়ী উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে তাঁকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি অ্যাক্টিং ভাইস চান্সেলর। তাঁর কার্যকালের মধ্যে নতুন স্থায়ী উপাচার্য তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করতেই পারেন, তাতে কোনও বাধা নেই। তাঁর শূন্যস্থানে নতুন নিয়োগের কথা তাঁকে একটিবার জানানোও হয়নি। তিনি যা জেনেছেন সবটাই মিডিয়ায়। একজন উপাচার্যের এটা প্রাপ্য নয়, এই অসৌজন্যের মধ্যে আছে এক ধরনের লা পরোয়া ভাব। অবশ্য অধ্যাপক হিসেবে সিটি কলেজ পর্যন্ত যাঁর দৌড় একজন উপাচার্যের মান-সম্মান তিনি বুঝবেন কী করে? বাংলার সিলভিয়া প্লাথের সুনজরে থাকতে পারলেই তাঁর জীবন ধন্য।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *