Sunday, September 8, 2024
Home Man-Woman শাকাহারি, ব্রহ্মচারী

শাকাহারি, ব্রহ্মচারী

সুমন চট্টোপাধ্যায়

সাক্ষাৎ ভগবান যা বুঝে উঠতে পারেননি (সম্প্রতি পেরে থাকলে আমার জানা নেই) সামান্য মনিষ্যি তা বুঝিবে কেমনে? নো প্রাইজ ফর গেসিং, আমি স্ত্রীচরিত্রের কথা বলছি আর কী!

আমার বন্ধু নূপুর (চৌধুরী) মেসেজ পাঠিয়ে অনুরোধ করেছে আজ নারী-দিবসে মেয়েদের নিয়ে কিছু লেখার জন্য। সুন্দরী নারীর আর্জি সঙ্গে সঙ্গে মেনে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে নারীজাতি সম্পর্কে আমার মনোভাব কিছুটা হলেও পরিষ্কার করে দিলাম। পুরুষের আর্জি যে কোনও সময় উপেক্ষা করা যায় কিন্তু মেয়েদের? নৈব নৈব চ।
আর পাঁচজনের কথা বলতে পারব না, একেক জনের কেস এক এক রকম। কোনও সাধারণ ফর্মুলাও নেই। অতএব আমি কেবল সংক্ষেপে নিজের কথা বলতে পারি, এই পর্যন্ত। সব সত্যি কথা চাইলেও বলতে পারব না, সেটা ভয়ঙ্কর অসভ্যতা হয়ে যাবে, সর্বোপরি গৃহে যিনি শ্রীমতী ভয়ঙ্করী হিসাবে বিরাজমানা তাঁর স্পর্শকাতরতার কথাও তো মনে রাখতে হবে।

আমায় যদি শুধোনো হয়, সর্বশ্রেষ্ঠ নারী কে, জবাব দিতে একটি অনুপল সময়ও নেব না।’মা’। ক্ষুদ্রতম ডাক, ব্যাপ্তি সমুদ্র সমান। জীবনের যা কিছু চাওয়া-পাওয়া-না পাওয়া, সুখ-দুঃখ, কষ্ট-আনন্দ, সবটাই যেন বলা হয়ে যায় ওই ছোট্ট ‘মা’ ডাকে। শিশু মাকে ডাকে নামের নেশায়, তারপর মা হয়ে ওঠে বিশ্ব-সংসারে সবচেয়ে বড় অবলম্বন। মা মানে কুলোর বাতাস, মা মানে আশ্রয়, মা মানে প্রশ্রয়, মা মানে ভরসা, মা মানে সুরক্ষা, মা মানে অকূলের কুল, অগতির গতি, নির্ভরতার শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। ফিলমি ডায়ালগ বলে আমরা যত হতচ্ছেদাই করিনা কেন, ‘মেরে পাস মা হ্যায়’ তো সব কুছ হ্যায়।

আমি অতি অল্প বয়স থেকে মা মরা ছেলে, তবু একদিনও তাঁর সঙ্গ ছাড়িনি। আনন্দের চেয়ে অনুতাপ হয় বেশি, ঈশ মা তার নাতি-নাতনিদের দেখে যেতে পারল না। নিজেদের চিকিৎসার জন্য বড় হাসপাতালে এলে মনে হয় মায়ের চিকিৎসাটুকু যদি এখানে করাতে পারতাম! হোটেল, রেস্তোঁরা, এরোপ্লেন, এলইডি টিভি, এয়ার কন্ডিশনার, মোটরগাড়ি কোনও কিচ্ছু দেখানো হল মাকে, দেওয়া গেল না কিঞ্চিৎ সুখের স্পর্শও। তখন নিজেকে কেমন যেন অপরাধী বলে মনে হয়, মা তোমার শূন্যতা কিছুক্ষণের জন্য হলেও চারপাশের সব কিছুকে অর্থহীন, মূল্যহীন করে তোলে।

ভেবে দেখেছি নিজের বাবার মূল্যায়ন ইচ্ছে করলে নৈর্ব্যক্তিক ভাবে করা যায়, বাবার এটা ঠিক ছিল না, ওটা অন্য রকম হলে ভালো হত এমন আর কী! প্রকৃত সন্তান মায়ের মূল্যায়নে একেবারেই নির্মোহ হতে পারবে না। মা যা করেছে সব ভাল, মা ক্যান ডু নো রং। অন্তত আমি তো কিছুতেই পারি না। যা কিছু মা পারত তাতেই শ্রেষ্ঠ। যেমন রবীন্দ্রসঙ্গীত, এ নিয়ে আগে অনেক বার লিখেছি, পুনরাবৃত্তি করছি না।
মায়ের এমন অবিবেচক প্রশংসার ঠ্যালা বুঝতে হয়ে ছেলের বৌকে। বিয়াল্লিশ বছর হল নিকাহ হয়ে গিয়েছে, কুচো চিংড়ি দিয়ে মায়ের মতো লাউঘন্ট গিন্নি রেঁধে উঠতেই পারল না। কিংবা হিং দিয়ে অড়হর ডাল, প্লাস্টিক চাটনি বা মুগের পুলি। বুদ্ধিমতী পুত্রবধূ যারা, রাগে গা রি রি করলেও তারা শাশুড়ির রান্নার সঙ্গে পাঙ্গা নেবে না। যারা নেবে তাদের কপালে দুঃখ অনেক।

অনেক ভেবে দেখলাম মায়ের পরে দ্বিতীয় স্থানে বসাতে পারি আমার আদরের কন্যাকে, সেও এখন পুরোদস্তুর নারী, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কোনও একজন মেয়ে আমাকে যদি সারাটা জীবন কেবল আনন্দ দিয়ে থাকে তাহলে সে টুপুর। এখন দেখলে আমার ওর শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে, দস্যিপনায় যখন সে সাক্ষাৎ হান্টারওয়ালি, সবাই তটস্থ টুপুর এক্ষুনি কী করে ফেলতে পারে তা নিয়ে। চোখের সামনে রাজকন্যে বড় হল, শান্ত হল, শুরু হল মেধার বিচ্ছুরণ। মেয়ে যা কিছু করেছে সম্পূর্ণ নিজের মুরোদে করেছে এটা ভাবলে আমার বড় গর্ব হয়, আমাকে কোনও দিন ওর জন্য কাউকে কিচ্ছু বলতে হয়নি। প্রথমে সেন্ট স্টিফেন্স, সেখান থেকে লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড অ্যাফ্রিকান স্টাডিজ, সেখান থেকে মার্কিন মুলুকের অস্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পি এইচ ডি, তারপর মিশিগানের অ্যান আরবারে পোস্ট ডক্টরাল, আপাতত ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক। মেয়ের মাথায় এক একটা করে পালক জুড়েছে, পেখম তোলা ময়ূরের মতো নেচেছে আমার মন। আমার কন্যাই সেইজন যাকে আমি সবার থেকে সবচেয়ে ভালবাসি। দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাক যে বাবাকে একটা হোয়াটস অ্যাপ করে কুশল জানতে চাইবে। চাইবেই।

মা আর মেয়ের আখ্যান শুনিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেছি, নূপুর ভাবতেই পারে। তা হলে এই যে কিলো কিলো মেয়ের কথা লোকে বলে বেড়ায় সে সব কি মায়া? তাদের একজনও জায়গা পাবে না সুমনের নারী-তালিকায়?

সঙ্গত কৌতুহল। কিন্তু শাকাহারি, ব্রহ্মচারী হওয়ার পর থেকে কামিনী-কাঞ্চনে আর রুচি নেই। তবে একথা ঠিক তেমন কাউকে দেখতে পেলে আমি আবার ব্রহ্মচর্য ছেড়েও দিতে পারি। পাচ্ছিনা তো!

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

রোশনী মুখোপাধ্যায় on ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির দেশ
অভিষেক মল্লিক on এবার দ্যাখ কেমন লাগে
Anupam Bhattacharyya on ব্রাজিল! (২)
অভিষেক মল্লিক on ওরে বাবা ব্রাজিল!
Partha Chakraborty on নীল সামুরাই
Manju Bhattacharjee on আমার জম্মোদিন
শুভাশীষ কবীর আইচ। on আমার জম্মোদিন
নবনীতা বসু হক on আমার জম্মোদিন
নীলার্ণব চক্রবর্তী on আমার জম্মোদিন
রোশনী মুখোপাধ্যায় on আমার জম্মোদিন
শুভাশিস ঘোষ on এ সত‍্য সকলি সত‍্য
শুভ্রেন্দু রায় on মহারাজ একী সাজ হে
কৌশিক শীট। on মহারাজ একী সাজ হে
মিহির গাংগুলী on মহারাজ একী সাজ হে
তাপস কুমার পাল on মহারাজ একী সাজ হে
অপূর্ব গঙ্গোপাধ্যায় on মহারাজ একী সাজ হে
শুভাশীষ কবীর আইচ। on মহারাজ একী সাজ হে
কল্যাণ সেনগুপ্ত on আহত পুতিন আরও বিপজ্জনক
অপূর্ব গঙ্গোপাধ্যায় on কী খাবে জানি, কী খাওয়া উচিত জানিনা
অপূর্ব গঙ্গোপাধ্যায় on রাণী গেলেন, অতঃকিম?
siddhartha ghosh on বসন্ত বিলাপ
Sanghamitra Roychowdhury on হাদি থেকে জেহাদি