সুমন চট্টোপাধ্যায়
আমি মোটামুটি দু’টি কাজ পারি। কলম চালাতে আর বকবকম করতে।কোনটা বেশি ভালো পারি, তার বিচারক আমি হতে পারিনা, হচ্ছিওনা।প্রশ্নটি যদি হয় কোনটাতে আমার অন্তরাত্মা তৃপ্ত হয়, চোখের পাতা পড়ার আগেই বলে ফেলব, লিখতে।
ইদানীং আমার একটি ইউ টিউব চ্যানেল হয়েছে। প্রত্যহ রাত্রি নয় ঘটিকায় সেখানে আমি কথা বলি।
একটু একটু করে সেই চ্যানেলের শ্রোতার সংখ্যা বাড়ছে, মন্দ লাগেনা। তবে সে আমার দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা, কোনও কাগজ লিখতে দেয়না, শাসকের রক্তচক্ষুকে ভয় পায়,আমি করবটা কী! সে কাজে ফাঁকি নেই, বিষয় বিশেষে পরিশ্রমও করতে হয়। পরে নিজেই যখন নিজের বকবকানি শুনি, মনে হয়, ‘ওয়াজ ইট ওয়ার্থ দ্য এফার্টস!’
লেখা এবং বলা দুটোই সংযোগ, বলতে পারেন সাংবাদিকতাও তাই।সারাটা জীবন ধরে আমি কেবল এই সংযোগ-কলাটি রপ্ত করার চেষ্টাই করে গিয়েছি। কখনও খবর লিখে, কখনও মতামত জানিয়ে,কখনও কোনও নতুন প্রবণতা সমাজে আমদানি হলে তার কথা শুনিয়ে।
যাই করিনা কেন, জন-অরণ্যের দিকে তাকিয়ে করে গিয়েছি, এখনও করে যাচ্ছি। সাংবাদিকের কাজ পিএইচডি-র থিসিস লেখা নয়, আঁতালামি নয়, জ্ঞান ফলানো নয়, অমরত্বের বাসনাও তার জন্য নয়।
তার কাজটি এ সবের চেয়েও কঠিন। কেন? সহজ উত্তর, ‘সহজ কথা যায়না বলা সহজে।’
আমার চ্যানেলে যে বিষয় নিয়েই বলিনা কেন, সহজ করেই বলার চেষ্টা করি, তবু শেষ হওয়ার পরে মনটা খুঁতখুঁত করে যা বলতে চেয়েছিলাম তা বলা হোল কী? এই যে অসহায় অসম্পূর্ণতাবোধ, লেখার ক্ষেত্রে ততটা হয়না। মুখ নিঃসৃত একটি বাক্য, ছিলা থেকে বেরোনো তীর, ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় থাকেনা, থাকেনা তৎক্ষণাৎ ভ্রম সংশোধনের অবকাশ। লেখা অনেক বেশি শান্তির, নিশ্চিন্তির ছায়াতল।
শব্দ অথবা বাক্য পছন্দ না হলে ইচ্ছেমতো কাটাকুটি করো, রয়েসয়ে শব্দের পিঠে শব্দকে
সাজাও, যতক্ষণনা স্বস্তির শ্বাস পরে ভাঙ্গা-গড়ার খেলা চালিয়ে যাও।
দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে হিমঘর থেকে ‘বাংলাস্ফিয়ার’ ওয়েবসাইটটির মুক্তি পাওয়ার ঘটনায় আমি যারপরনাই আহ্লাদিত। অনেকটা হারিয়ে যাওয়া সন্তান ঘরে ফিরে আসার মতো ঘটনা। এখানে আবার লিখব, স্বজনবন্ধুদের দিয়ে লেখাতে পারব, জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় আমার কাছে এটাই স্বপ্নসুখ।
তবে বাংলাস্ফিয়ারের সাবেক অবতারের সঙ্গে নতুন চেহারার পার্থক্য থাকবে, এখনও তার রূপরেখাটা যদিও স্পষ্ট হয়নি। তবে এবার আমি নিজের যেটা হোম-গ্রাউন্ড সেখানে ফেরার চেষ্টা করব, মানে খবরওয়ালার অবতারে। বাংলা সাংবাদিকতা বরবরই বদ্ধ জলাশয়ে আবদ্ধ ছিল, এখন জলটুকুও শুকিয়ে গিয়েছে। খবরের চ্যানেল মানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বাইট-লড়াই, প্রাইম টাইমে গুটি কতক পছন্দের লোককে বসিয়ে মোরগ লড়াই আর খবরের কাগজ শুধুই আগের দিনে টেলিভিশনে দেখে ফেলা বাসি খবর মাইক্রোয়েভ থেকে বের করে পরিবেশন করা। কোথাও কোনও খবর নেই, নেই অনুসন্ধান, না গতর খাটানোর সদিচ্ছা। অথচ রাজমহল পাহাড়ের ওপারে গোটা ভারতবর্ষ পড়ে আছে, দুনিয়ার কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল। আমি একক প্রচেষ্টায় বেশি কিছু করতে পারবনা। যেটুকু পারব সেটা হবে চাকভাঙা মধু।
সামনে ভোট। বাঙালি এ সময় অন্য কোনও কিছুর কথা ভাববেনা। ভোট আসলে আই পি এল ম্যাচের মতোই তাৎক্ষণিকভাবে উত্তেজক যদিও দিন কতক পরেই কে কত রান করল, কে কয়টা উইকেট নিল তা আর কারও মনেই থাকেনা। ভোট নিয়ে আমার দৈনন্দিন লেখাতো থাকবেই।
দেখি ডাল-ভাতের সঙ্গে সস্তায় পুষ্টিকর আর কী ব্যঞ্জন|